শিক্ষা, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা, কোনো বিলাস নয়Ñএটি একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্মাণের অনিবার্য উপাদান। অথচ আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) বিগত চার বছরে ভর্তি ফি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে যেখানে ভর্তি ফি ছিল ৮,১০০ টাকা, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সেটি গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮,০০০ টাকায়। সামান্য এক হাজার টাকা কমিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষে ১৭,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা অনেক পরিবারের সামর্থ্যরে বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গুচ্ছ পদ্ধতি এবং পরবর্তীতে নিজস্ব পদ্ধতিতে ফিরে আসার ফলে লজিস্টিক খরচ বেড়েছে, নতুন প্রযুক্তি ও উপকরণ কেনায় কোটি টাকার ব্যয় হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেÑএই ব্যয়ের বোঝা কি কেবল শিক্ষার্থীরাই বহন করবে? একজন শিক্ষার্থীর জন্য ভর্তি ফি শুধু একটি সংখ্যা নয়, তা একটি পরিবারে অর্থনৈতিক ভারসাম্যের সঙ্গে জড়িত, কখনও কখনও তা স্বপ্ন ও বাস্তবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক অদৃশ্য দেয়াল। বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের ওপর একের পর এক ব্যয় বৃদ্ধির চাপ সৃষ্টি করা এক ধরনের বৈষম্যই বলা চলে। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে তুলনামূলক কম ফি নেওয়া হয়, সেখানে শাবিপ্রবির এমন প্রবণতা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হওয়া উচিত শিক্ষায় সুযোগ সৃষ্টি করা, সেটিকে সীমিত করা নয়। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি 'পুনর্বিবেচনার' কথা বললেও তা যেন শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে। এটা মনে রাখা জরুরি, যারা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারছে না শুধু মাত্র আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে, তারা ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় গবেষক, শিক্ষক বা বিজ্ঞানীÑতাদের হারানো মানে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা আহ্বান জানাই, শাবিপ্রবি প্রশাসন যেন এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এবং ভর্তি ফি এমনভাবে নির্ধারণ করে যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য সহনীয় হয়। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হোক, যাতে রাষ্ট্রীয় অনুদান এবং প্রকল্পের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়। জ্ঞানকে যেন দামের খাঁচায় আটকে না ফেলিÑতবে তবেই সম্ভব হবে একটি জ্ঞাননির্ভর ও সমান সুযোগের সমাজ গঠন।