চার বছরেও শেষ হয়নি কান্দিখাল খনন: জলাবদ্ধতার শঙ্কা

এফএনএস | প্রকাশ: ৪ মে, ২০২৫, ০৭:২০ পিএম
চার বছরেও শেষ হয়নি কান্দিখাল খনন: জলাবদ্ধতার শঙ্কা

নগর জীবনে জলাবদ্ধতা কেবল একটিমাত্র মৌসুমি সমস্যা নয়, এটি নাগরিক জীবনের গতিকে স্থবির করে দেয়। কুমিল্লা মহানগরীর কেন্দ্রে অবস্থিত কান্দিখাল এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ, যা একসময় নগরবাসীর যাতায়াত ও পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম ছিল। অথচ আজ এই খালটির দুরবস্থা নগর উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। খাল উদ্ধার হলেও চার বছরেও এর সম্প্রসারণ ও খনন কাজ সম্পন্ন হয়নি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। ২০২১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন যে সাহসিকতা ও উদ্যোগ নিয়ে খাল দখলমুক্ত করেছিল, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে খাল উদ্ধারই ছিল না একমাত্র লক্ষ্যÑউদ্ধার হওয়া অংশের উন্নয়ন, খনন এবং স্থায়ী রক্ষার ব্যবস্থাও জরুরি ছিল। আজ চার বছর পেরিয়ে গেলেও খাল সম্প্রসারণের কাজ দৃশ্যমান হয়নি। সামনে বর্ষা মৌসুম। এই সময়ে কাজ অসম্পূর্ণ থাকলে নগরজুড়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা অমূলক নয়। কান্দিখালের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার হলেও এর বিভিন্ন অংশ এখন সরু নালায় রূপান্তরিত হয়েছে। টমছমব্রিজ মোড় থেকে নোয়াগাঁও মোড় পর্যন্ত খালের প্রস্থ যেখানে ৭৯ থেকে ৯৫ ফুট হওয়ার কথা, সেখানে তা এসে ঠেকেছে মাত্র ১৫-২০ ফুটে। এমন সংকীর্ণতা শুধু পানি নিষ্কাশনকে ব্যাহত করছে না, বরং ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ পরিবেশগত হুমকি তৈরি করছে। স্থানীয় নাগরিকদের উদ্বেগ যথার্থ। তাঁদের কথায় উঠে এসেছে খাল নিয়ে স্মৃতি, ইতিহাস ও বাস্তব প্রয়োজনের সুর। একসময় যেখানে নৌকা চলত, সেখানে এখন জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কান্দিখালের মতো একটি প্রধান খাল রক্ষা করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি নাগরিক দায়িত্ববোধেরও প্রতিফলন। যা সবচেয়ে দুঃখজনক, তা হলো উদ্ধার হওয়া অংশ খননের আওতায় না আনলে তা আবারও দখলের আশঙ্কায় পড়বে। অতীতেও এমন হয়েছে, উদ্ধারকৃত জায়গা পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে আবারো বেসরকারি দখলে চলে গেছে। তাই উচ্ছেদ-পরবর্তী স্থায়ী অবকাঠামো (যেমন রিটার্নিং ওয়াল) ও দ্রুত খননের মধ্য দিয়েই এই খালকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। আমরা মনে করি, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে এই প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে খাল খনন ও উন্নয়ন কাজ বর্ষার আগেই সম্পন্ন করতে হবে। প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে নাগরিকরা প্রকৃত ফল পায়। পাশাপাশি নাগরিকদেরও এ বিষয়ে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। কেবল কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দিতে হবেÑআমরা সত্যিই একটি জলাবদ্ধতামুক্ত, বাসযোগ্য নগর চায়।