খুলনা একসময় ছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্পনগরী। বস্ত্র, জাহাজ নির্মাণ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সার ও চামড়া শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলোর মাধ্যমে খুলনা শুধু কর্মসংস্থান নয়, জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখত। কিন্তু আজ এই নগরী চরম জ্বালানি সংকটে ভুগছে। পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাসের অভাবে একের পর এক শিল্পপ্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও সাধারণ মানুষ। গ্যাস সংকটের ফলে বাধ্য হয়ে উদ্যোক্তারা বিদ্যুৎ ও ফার্নেস অয়েলের মতো ব্যয়বহুল বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করছেন। এতে উৎপাদন ব্যয় এতটাই বেড়ে গেছে যে, তারা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে এই বাড়তি ব্যয় বহন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে শিল্পে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে এবং একের পর এক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছেÑযা খুলনার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে শিল্পোদ্যোক্তারা ও নাগরিক সমাজ আর চুপ থাকতে পারেননি। সম্প্রতি খুলনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে নাগরিক সংগঠন ‘বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’-র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় অবস্থান কর্মসূচি। তাদের দাবি স্পষ্টÑখুলনায় দ্রুত পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বক্তারা আশঙ্কা করেছেন, এখন সোচ্চার না হলে ভবিষ্যতে খুলনায় গ্যাস সংযোগ আদায় করাও কঠিন হয়ে যাবে। ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে রুট পরিবর্তনের যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, নাগরিক সংগঠনের নেতা, আইনজীবী ও বিশিষ্টজনেরা। দলমত নির্বিশেষে তাদের একমত, খুলনার উন্নয়নের জন্য গ্যাস সরবরাহ অনিবার্য। আন্দোলনকারীরা ইতোমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি মানা না হলে তাঁরা শিগগিরই গণঅনশন কর্মসূচি পালন করবেন। খুলনার মানুষ কেবল সুযোগের প্রত্যাশা করে নাÑতারা অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধও। অথচ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা এখনো এই সংকট নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। গ্যাস সংযোগ না থাকায় এ অঞ্চলের মানুষ পিছিয়ে পড়ছে, শিল্প মরছে, কর্মসংস্থান কমছে, আর জাতীয় অর্থনীতির চাকা একপাশ থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এটি শুধু খুলনার সমস্যা নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্যের প্রশ্ন। সরকারের উচিত, অবিলম্বে খুলনায় গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করা এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অগ্রগতি ও রুট নিয়ে যেকোনো বিভ্রান্তির নিরসন করা। একইসঙ্গে শিল্প উদ্যোক্তাদের স্বল্পমেয়াদি সহায়তা প্রদান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ওপর ভর্তুকি বিবেচনা এবং বিকল্প জ্বালানির স্থায়ী সমাধান বের করা। একটি শহরের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়ার চেয়ে এখনই সময়, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের।