গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আহত হওয়ার ঘটনায়ও অনেক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রকৃত আসামি, সন্দিগ্ধ ব্যক্তির পাশাপাশি হয়রানিমূলকভাবেও অনেককে আসামি করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, অন্যত্র থাকা মানুষ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিও রয়েছেন। ঢালাওভাবে দায়ের করা মামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হচ্ছে আরও কয়েকশ জনকে। এর মধ্যে বেশ কিছু মামলায় অনেক নিরপরাধ-নিরীহ মানুষদেরও আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ঢালাওভাবে করা এসব মামলায় এরই মধ্যে আসামি করে অথবা আসামি করার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি, কিংবা মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার নামে বাণিজ্যের অভিযোগ দিনে দিনে বেড়েই চলছে। পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এখন মামলাগুলো নিয়ে বাণিজ্য শুরু করেছে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন চক্র। টাকার বিনিময়ে গ্রেপ্তার করিয়ে দেওয়া, গ্রেপ্তারের পর পুলিশের হেফাজত থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া, মামলার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া অথবা আসামির তালিকায় নাম যোগ করা ইত্যাদি কথা বলে চক্রটি নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে বিষয়টি স্বীকার করে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবারই বক্তব্য দিয়েছেন। ভুয়া মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অনেক মামলার বাদী চিনেন না আসামিকে, আসামি চিনেন না বাদীকে। পারিবারিক কলহ থেকে ও পূর্বশত্রুতার জেরে অনেক নিরীহ মানুষকে এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। ঘটনার দিন এলাকায় ছিলেন না, রোগে ভোগে মারা গেছেন, এমনকি মৃত ব্যক্তির নামও রয়েছে আসামির তালিকায়। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করে ব্যবসায়ীসহ অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়িয়ে মানবাধিকার চরম লঙ্ঘন হওয়ার শঙ্কা থাকছে। যেভাবে মামলা হয়েছে এতে সুবিচার হবে কি না, এটা নিয়েই সন্দেহ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে কখনোই বিচারিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ধারায় এগোবে না। সরকার যদি সত্যি সত্যি জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়, তাহলে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করতেই হবে। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক মামলা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের মামলা করার মাধ্যমে যাঁরা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।