ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পাশাপাশি হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা পালন করছেন ধর্মঘট ও বিক্ষোভ, অন্যদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্রদলের মানববন্ধনে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
গত ১৩ মে রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালীমন্দির গেটের সামনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন থেকেই ক্যাম্পাসে শুরু হয় ছাত্রদের বিক্ষোভ। ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে। তাঁরা উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিও জানান। অপরদিকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা অভিযোগ করেন, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘সাম্য ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, এমন সব স্লোগানে মুখর হয় গোটা কর্মসূচি।
মানববন্ধনে রিজভী বলেন, “সাম্য একটি পোস্ট দিয়েছিল জাতীয় সংগীতের পক্ষে। কয়েকদিন পরই সে খুন হলো। ভবঘুরে কেউ এমন শিক্ষার্থীকে খুন করবে কেন? আমার মনে হয়, এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। যারা জাতীয়তাবাদের দর্শনে বিশ্বাস করে, তাদের জন্য এই সরকার বা প্রশাসনের সহানুভূতি নেই।”
রিজভী আরও অভিযোগ করেন, “ঢাবি ভিসি ও প্রক্টর একটি রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। শিক্ষার্থীরা বিচার চাইতে গেলে তাদের সঙ্গে তুইতাকারি করা হয়। এটাই প্রমাণ করে, এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে।”
তিনি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, “তিনজন হকারকে গ্রেপ্তার করেই দায়িত্ব শেষ ভাববেন না। এই ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। জনগণ সহজে মেনে নেবে না।”
সাম্য হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও প্রতিবাদ জানিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা পরিস্থিতির এমন অবনতির দায় নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই।
উল্লেখ্য, শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় ঘটনার পরপরই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের সবাই পেশায় হকার এবং রাতে মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। যদিও রাজনৈতিক নেতারা এই তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন এবং স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই হত্যাকাণ্ড যদি সত্যিই কোনো মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব বা রাজনৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে, তবে সেটি কেবল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গোটা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।