দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ২৭০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৫ মে, ২০২৫, ০৬:৪১ পিএম
দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ২৭০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনরুদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত মঙ্গলবার (১৩ মে), সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশকে ২৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা) অর্থায়ন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সহায়তা ২০২৪ সালের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো, কৃষি ও জীবিকার পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতের দুর্যোগে প্রস্তুতি জোরদারে ব্যয় করা হবে।

‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমার্জেন্সি প্রিপার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স’ (সংক্ষেপে বি-স্ট্রং) নামে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বন্যাকবলিত এলাকায়। প্রকল্পটির আওতায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে উপকৃত হবেন প্রায় ১৬ লাখ মানুষ।

বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন এক বিবৃতিতে বলেন,

“জলবায়ু পরিবর্তন ও ঘন ঘন দুর্যোগ বাংলাদেশের জন্য ক্রমাগত হুমকি হয়ে উঠছে। এই প্রকল্প শুধুমাত্র অবকাঠামো পুনরুদ্ধারে নয়, বরং দুর্যোগের আগে প্রস্তুতি ও ক্ষতিগ্রস্তদের জীবিকা উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।”

প্রকল্পের মূল কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে:

১. ৭৯টি বহুমুখী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও সংস্কার – যা শান্তিপূর্ণ সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে

২. বাঁধ, সড়ক ও সেতু মেরামত

৩. খাল পুনঃখনন

৪. আধুনিক বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু

৫. জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য নৌকা, সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্পটির টিম লিডার স্বর্ণা কাজী বলেন, “এই প্রকল্পে অবকাঠামোগত ও অ-অবকাঠামোগত উভয় ধরণের পদক্ষেপ রাখা হয়েছে, যাতে একটি পূর্ণাঙ্গ ও দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ প্রস্তুতি গড়ে তোলা সম্ভব হয়।”

শুধু অবকাঠামো নয়, এই প্রকল্পে জীবিকা উন্নয়নেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ পাবে নগদ অর্থ সহায়তা, কর্মমুখী দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ।

এছাড়া ৬৫ হাজার কৃষক পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে উচ্চফলনশীল, জলবায়ু সহনশীল ও টেকসই কৃষি প্রযুক্তি, মানসম্পন্ন বীজ ও চারা, কৃষি যন্ত্রপাতি ও সেচ সুবিধার মাধ্যমে। এর অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে ‘সিড ভিলেজ’। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হবে বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ ও কমিউনিটি পর্যায়ের বাগান গড়ে তুলতে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, এই প্রকল্প এমন কিছু খাতকে অন্তর্ভুক্ত করছে, যেগুলো অতীতের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনায় প্রায়ই উপেক্ষিত ছিল। প্রকল্পটি শুধু বর্তমান সংকট মোকাবিলায় নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্যও একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপন করবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৪৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান ও সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে সংস্থাটির সবচেয়ে বড় সুদমুক্ত ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর একটি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে