প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারও বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
নজরুল ভিডিও বার্তায় জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যেতে না পারা ১৭ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রথম ধাপে ৭ হাজার ৯২৬ জনের তালিকা চূড়ান্ত করেছে দেশটির সরকার। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এরা মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন। তিনি বলেন, “মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন—আগামী কয়েক মাসে তারা ১ থেকে দেড় লাখ বিদেশি শ্রমিক নেবে এবং বাংলাদেশকে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।”
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে এবং সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আগেরবার এজেন্সি নির্ধারণ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়, যার ফলে শ্রমিক নিয়োগে চক্রভিত্তিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এবার যেন এমন না হয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা প্রদান এবং অবৈধ হয়ে যাওয়া কর্মীদের বৈধ করার প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়ান মন্ত্রীরা জানিয়েছেন, তারা এই প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করবেন। বিশেষ করে যেসব শ্রমিকদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের অনেকের ক্ষেত্রে মালিকের দায় রয়েছে—এ বিষয়েও সমাধান চেয়েছে বাংলাদেশ।
এই সফরের অংশ হিসেবে আগামী ২১ ও ২২ মে ঢাকায় দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এখানে শ্রমিক নিয়োগের প্রযুক্তিগত দিক, প্রক্রিয়া ও নীতিমালা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে।
২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক গেছেন। ২০২৩ সালেই সাড়ে তিন লাখের বেশি শ্রমিক সেখানে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। তবে বাজার একাধিকবার বন্ধ হয়েছে—২০০৭-০৮ সালে চার লাখ এবং ২০১৭-১৮ সালে তিন লাখ শ্রমিক পাঠানোর পর বাজার বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গেছেন।
বর্তমানে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ শুরু হলে তা দেশের শ্রমবাজারে বড় ধরণের স্বস্তি নিয়ে আসবে এবং বৈধ উপায়ে কর্মী প্রেরণে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।