আগামী অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন: কমেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ১৮ মে, ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম | প্রকাশ: ১৮ মে, ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম
আগামী অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন: কমেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে রোববার (১৮ মে) অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এই তথ্য জানান।

এবারের এডিপির আকার গত বছরের তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপি ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে কিছুটা হ্রাস পায়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবারের এডিপি প্রণয়নের সময় দেশের আর্থিক সক্ষমতা, বৈদেশিক সহায়তা এবং সার্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

অনুমোদিত ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সরকারি তহবিল (স্থানীয় উৎস) থেকে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে। এর পাশাপাশি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে আরও ৮ হাজার ৫৯৯ কোটি ৭১ লাখ টাকার উন্নয়ন ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে, যা নিয়ে মোট এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

নতুন এডিপিতে ১ হাজার ১৪২টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছে অবকাঠামো, জ্বালানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত। তবে প্রায় সব খাতেই বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় কমেছে।

বরাদ্দপ্রাপ্ত শীর্ষ খাতসমূহ

পরিবহণ ও যোগাযোগ খাত: ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা

শিক্ষা খাত: ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা

গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধা: ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা

স্বাস্থ্য খাত: ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন: ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা

কৃষি খাত: ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা

পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ: ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা

শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা: ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা

এবার সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, যার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

এরপর রয়েছে:

সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ: ৩২ হাজার ৩২৯ কোটি ৫৭ লাখ

বিদ্যুৎ বিভাগ: ২০ হাজার ২৮৩ কোটি ৬২ লাখ

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ: ১৩ হাজার ৬২৫ কোটি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়: ১২ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৩ লাখ

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ: ১১ হাজার ৬১৭ কোটি ১৭ লাখ

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়: ১১ হাজার ৩৯৮ কোটি ১৬ লাখ

নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়: ৯ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬২ লাখ

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়: ৮ হাজার ৪৮৯ কোটি ৮৬ লাখ

রেলপথ মন্ত্রণালয়: ৭ হাজার ৭১৪ কোটি ৯৯ লাখ

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দারিদ্র্য হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং ডিজিটাল খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এডিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তায় চলমান প্রকল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উন্নয়ন ব্যয় কিছুটা সংযত করা হয়েছে। ফলে এবার বিভিন্ন খাতে এডিপির বরাদ্দ কমেছে, বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে পরিবহণ, বিদ্যুৎ ও স্থানীয় সরকার খাতে বরাদ্দ অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে চায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে