জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুইভাগে বিভক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তকে ঘিরে যে অসন্তোষ এবং বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল, তা অবশেষে প্রশমিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এনবিআরকে দুইটি বিভাগ—‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’—আকারে যেভাবে ভাগ করা হয়েছে, সেটিই বহাল থাকবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর উপদেষ্টা আশাবাদ প্রকাশ করেছেন যে, এই কাঠামো কার্যকর করেই সামনের পথ এগিয়ে যাবে।
মঙ্গলবার (২১ মে) সচিবালয়ে কর ও কাস্টমস ক্যাডারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে এবং এখন বিষয়টি বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা ২ জুন বাজেট পেশ করবো, এরপর এ বিষয়ে কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, গত ১২ মে রাতে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এনবিআরকে দুটি বিভাগে বিভক্ত করে 'রাজস্ব নীতি' ও 'রাজস্ব ব্যবস্থাপনা' নামে দুটি পৃথক ইউনিট গঠন করা হয়। তবে এই সিদ্ধান্তে কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তারা দাবি করেন, প্রজ্ঞাপনে তাদের ভূমিকা সীমিত রাখা হয়েছে এবং তাতে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন। এর প্রতিবাদে এনবিআরের অনেক কর্মকর্তা গত কয়েকদিন ধরে কলম বিরতি পালন করেন।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, গেজেট প্রকাশসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব এনবিআর বিভাজনের বাস্তবায়ন শুরু হবে। যদিও তিনি বলেন, “এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফর্মালি আর কোনো বৈঠক হবে না, তাদের উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমেই বিষয়টি সামাল দেওয়া হবে।”
এদিকে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় এখন কর্মকর্তাদের মতামতের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং এ বিষয়ে শিগগিরই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাদের বলেছি আন্দোলন থেকে সরে আসুন। তারা কি বলেছে, সেটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা রাষ্ট্রের ও দেশের স্বার্থে কাজ করছি।” গেজেট প্রকাশের আগে যেসব আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে, তা দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
এখন সকলের দৃষ্টি আগামী বাজেট অধিবেশন ও এনবিআরের কাঠামোগত পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়নের দিকে, যেখানে সরকারি কর্মচারীদের মতামত ও অংশগ্রহণও বিবেচনায় আনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।