দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগ দাবি নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এই দাবিকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখছেন না। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার জন্যও তারা প্রস্তুত। একই সঙ্গে তিনি ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং আরেকটি ‘ওয়ান-ইলেভেনের পথ’ সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার (২১ মে) বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসব তথ্য শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ছাত্র উপদেষ্টাদের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চাওয়ার গুজব ছড়িয়ে নেতিবাচক ইমেজ তৈরির জন্য একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত চলছে, যা এনসিপিকে নির্বাচনবিরোধী আখ্যা দিয়ে কলঙ্কিত করার প্রচেষ্টা। তিনি উল্লেখ করেন, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নির্বাচন বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। দু’জনই চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন।
তবে দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তা অবরোধ ও আন্দোলনকে হাসনাত স্বাভাবিক বা গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখছেন না। তিনি বলেন, “অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হওয়া দুইজন ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া মোটেই স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।”
ঢাকা সেনানিবাসের সেনাপ্রাঙ্গণে গত রাতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সেনাপ্রধানের বরাত দিয়ে বলা হয়, নির্বাচনের জন্য সংস্কার বিষয়ে তার অবগতির সীমিততা রয়েছে এবং মানবিক করিডরসহ নির্বাচনের সকল প্রক্রিয়া নির্বাচিত সরকারের অধীনে হওয়া উচিত। এছাড়া সেনাপ্রধান নির্বাচনের সময়সীমা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ধারণের কথা বলেছেন। এসব বিষয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ তার পোস্টে বলেন, “আমাদের সাব-কনশাস মাইন্ডে আর্মিকে রাজনৈতিক সালিশের ক্ষমতা দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে বিএনপি ঐতিহাসিকভাবে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ভুক্তভোগী দল।”
হাসনাত আরও জানান, সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা সতর্ক পাহারাদার। দেশের প্রয়োজনে তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব, তবে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পেছনে থাকা গণতান্ত্রিক অধিকার ও সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের আকাঙ্ক্ষাকে আঘাত করতে দেবেন না। “রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না, আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পথ তৈরি হচ্ছে কি না সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে,” তিনি বলছেন।
এছাড়াও হাসনাত আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা, আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচনে যাওয়ার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি।” তিনি বলেন, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর উদ্ভূত সম্ভাবনার জনআকাঙ্ক্ষাকে নষ্ট করলে তা ঐতিহাসিক ব্যর্থতা হবে।
শান্তি, সমন্বয় ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তিনি দেশীয় ষড়যন্ত্র ও বৈদেশিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। “ভিন্নমতের মাধ্যমে বিভাজনের পথ বেছে না নিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলতে দেবেন না,” তিনি যোগ করেন।