ঢাকাসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। অনেক এলাকায় সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষ ভয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। বিশেষ করে রাজধানীতে অপরাধের মাত্রা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। মোহাম্মদপুরসহ অনেক এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। রাজধানীর অন্য এলাকাগুলোর জননিরাপত্তাও হুমকির মুখে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, অপরাধের তাৎক্ষণিক প্রতিকার চেয়ে তারা কোনো সুফল পাচ্ছেন না। যেভাবে চলছে, তা অব্যাহত থাকলে সামনে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারাই। তারা পুনর্গঠিত জেলা ও বিভাগীয় আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে পুলিশকে অবমূল্যায়ন করাকে এজন্য দায়ী করছেন। রাজধানীর সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খুন হয়েছেন। এর আগে ঢাকার সাভারে প্রকাশ্যে গুলি করে এক যুবককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া ১৮ মে রাতে রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে এক যুবককে প্রকাশ্যে কোপানোর দুই মিনিট ছয় সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। খুলনায়ও ২২ এপ্রিল দুপুরে প্রকাশ্যে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এভাবে নগর ছাড়িয়ে পুরো দেশেই বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে চলছে খুন-ছিনতাই-রাহাজানির মতো অপকর্ম। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিলে সারা দেশে বিভিন্ন অপরাধে ১৬ হাজার ৩৬৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৩৩৬টি। এছাড়া গত ২৪ দিনে সারা দেশে ঘটেছে ২৩টি পুলিশ আক্রান্তের ঘটনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মানবিক-পুলিশিং করতে হবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, কঠোর না হয়ে পুলিশিং করা সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, যে উপায়েই হোক, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার বিকল্প নেই। জুলাই বিপ্লবের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুরোপুরি কার্যকর করা যাচ্ছে না কেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে যৌথ বাহিনীর অভিযানের পরিধি বাড়াতে হবে। ঘটনা ঘটে গেলে নয়, অঘটনের আগেই তা ঠেকাতে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পতিত সরকারের দোসরদের কোনো পক্ষ অথবা আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত কেউ অপরাধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে কি না কিংবা তারা নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে কি না, সেদিকেও নজর দিতে হবে। আমরা আশা করি, রাজধানীসহ সারা দেশে হত্যা-খুনসহ সব ধরনের অপরাধ ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।