নিয়োগে দূর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগে

তানোরে প্রধান শিক্ষক রবিউলের বিরুদ্ধে সহকারী শিক্ষক হারুনের চাঁদাবাজির মামলা

মো: ইমরান হোসাইন; তানোর, রাজশাহী | প্রকাশ: ৩১ মে, ২০২৫, ১১:৪৫ এএম
তানোরে প্রধান শিক্ষক রবিউলের বিরুদ্ধে সহকারী শিক্ষক হারুনের চাঁদাবাজির মামলা
চাঁদাবাজি, প্রতারণা, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পত্রিকা টেম্পারিং ও নথি জালিয়াতির অভিযোগ এনে রাজশাহীর তানোর পৌরসভা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মো. রবিউল ইসলাম মন্টু (৫৭) এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেছেন তারই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক হারুন আর রশিদ। সম্প্রতি বুধবার ২১ মে রাজশাহীর বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ৬-এ মামলাটি দায়ের করেন হারুন মাস্টার। যার মামলা নং- ৩০৬সি/২৫। আবেদনে ৪২০/৪৬৩/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৩৮৫/৩৪ ধারার দন্ডবিধি উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক এমন মামলার নথি বৃহস্পতিবার হাতে পেয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত শুরু করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলে এ প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের বাড়ি মথুরাপুর গ্রামে। কিন্তু রাজশাহী নগরীতে বাস করেন তিনি। আর বাদী সহকারী শিক্ষক হারুনের বাড়ি পাশের আমশো গ্রামে। প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম দূর্নীতি বিরোধী উপজেলা কমিটির সভাপতি। তিনি দূর্নীতি বিরোধী কমিটির সভাপতি হলেও আদালতে মামলার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বরাবর ২৭ মার্চ দাখিল করা হয়। এমন অভিযোগ তদন্তের জন্য নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে সত্যতা আছে মর্মে প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে আদেশ দেন। এর অনুলিপি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে পাঠানো হয়। মামলায় অপর দু’জন আসামি করা হয়েছে অত্র প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি আমশো গ্রামের বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন মোল্লা (৬৫) ও রায়তান আকচা গ্রামের নুরুল ইসলাম শাহকে (৫০)। তিনি ওই স্কুলের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক। মামলায় স্বাক্ষী হিসেবে মান্য করা হয়েছে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সাবেক বিদ্যুৎসায়ী সদস্য মথুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা মুনতাজুর রহমান, একই গ্রামের কাউসার আলী সরকার ও আমশো গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক ইকবাল আলী মোল্লাকে। মামলার নথিপত্র ঘেঁটে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী গত ২০০৩ সালের ১২ মে নিয়োগ প্রাপ্ত হন হারুন মাস্টার। ওই সালের ১৭ মে ১৫(২) স্বারকে যোগদানও করেন তিনি। এঅবস্থায় ২০১০ হতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংশোধিত হয়ে সহকারী শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষাপদে ২২ বছর যাবৎ বিনা বেতনে পাঠদান করিয়ে আসছিলেন হারুন মাস্টার। পরে জনবল কাঠামো ২০২১ নীতিমালা প্রণীত হলে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে হারুন মাস্টারের বেতন ভাতা সমন্বয়ের মাধ্যমে এমপিও হবার সুযোগ আসে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম হারুন মাস্টারের এমপিও কাগজ না পাঠিয়ে ইংরেজি শিক্ষক নুরুল ইসলাম শাহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অবৈধ সুবিধা নিয়ে তাকে সামাজিক বিজ্ঞান পদে এমপিও করেন। যা সম্পূর্ণ ভাবে জালিয়াতি ও অবৈধ। তবে, ওই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক নুরুল ইসলাম শাহ এবিষয়ে কোন মন্তব্য না করে এড়িয়ে গেছেন। হারুন মাস্টার মামলার এজাহারে বলেন, প্রধান শিক্ষকের এমন জালিয়াতির তথ্য ফাঁস হবার পর তিনি হতবাক হন। পরে নিরুপাই হয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের এমন দূর্নীতির ব্যাপারে বলতে গেলে প্রধান শিক্ষক বলেন সবাই টাকা দিয়ে এমপিও ভুক্ত হয়েছেন। তার এমপিও ভুক্তির জন্য ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দিলে কাগজপত্র প্রেরণ করা হবে তা না হলে তার কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হবে না। তোমার আর চাকুরি নেই, স্কুলে এসো না মর্মে জবাব দেয়। তখন নিরুপাই হয়ে রাজশাহীর বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৬ এ একটি মামলা দায়ের করি। যার মামলা নম্বর- ১৭৩সি/২৩ (তানোর)। ধারা ৩৮৫/৩৮৭/৫০৬ দন্ডবিধি। হারুন মাস্টার আরও বলেন, উক্ত মামলা তদন্তধীণ অবস্থায় তাকে ওইপদে নিয়োগ পাইয়ে দেবেন মর্মে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে অপোষ করে গত ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট তাকে দ্বারা মামলাটি কৌশলে প্রত্যাহার করে নেয় প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম। কিন্তু পরে হারুন মাস্টারকে কৌশলে আর ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে নিরুপাই হয়ে গত বুধবার ২১ মে রাজশাহীর বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ৬-এ ৩০৬সি/২৫ নম্বর মামলাটি দায়ের করেন তিনি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম শিক্ষক নিয়োগে দূর্নীতির পাশাপাশি জাতীয় উপবৃত্তির কর্মসূচির টিউশান ফি নিজে নিয়ে অন্য শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এমনকি চারজন শিক্ষকের সিনিয়র স্কেলের জন্য চাঁদা দাবি করে। নইলে ছাড় হবে না বলেও সাব জানিয়ে দেন তিনি। প্রধান শিক্ষকের এমন অনিয়ম-দূর্নীতি আর জালিয়াতি ও চাঁদাবাজিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন স্কুলের অসহায় শিক্ষকরা। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম মুন্টুর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাদের যা খুশি করতে পারে। শুনেছি মামলা হয়েছে। আইনি ভাবে মামলার বোকাবেলা করা হবে। মানুষ জানে আমি চাঁদাবাজ না প্রতারক। কারো স্বার্থে আঘাত লাগলে এসব করবেই এটাই বাস্তবতা বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি। ই/তা
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে