তেহরানে বিমানবন্দরে ইসরায়েলি হামলা, আগুনে ধ্বংসস্তূপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ১৪ জুন, ২০২৫, ১০:৩৭ এএম
তেহরানে বিমানবন্দরে ইসরায়েলি হামলা, আগুনে ধ্বংসস্তূপ

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক সংঘাতে। ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলার জবাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান, যার অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি ভূখণ্ড। এরই মধ্যে শনিবার (১৪ জুন) ভোরে ইসরায়েলের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র তেহরানের মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আঘাত হানলে সেখানে আগুন লেগে যায় ও ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ঘটনার দিন ভোরে ইরানি সংবাদ সংস্থা তাসনিম ও ফার্স নিউজ নিশ্চিত করে, বিমানবন্দর এলাকায় অন্তত দুটি মিসাইল আঘাত হানে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা গেছে। বিস্ফোরণের পর পশ্চিম তেহরানের ভার্দাভার্ড এলাকাতেও প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেছে।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দরের রানওয়েতে বড় ধরণের আগুন জ্বলতে দেখা গেছে এবং পুরো এলাকা ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ জানায়, একটি বিস্ফোরণ হয় বিমানবন্দর এলাকায়, যার পরপরই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ইসরায়েল ২০০টির বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের প্রায় ১০০টি স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালায়। এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, সামরিক অবকাঠামো ও আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম। ইরান দাবি করেছে, এই হামলায় সেনাপ্রধান, রেভ্যলুশনারি গার্ডের প্রধান, ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জন নিহত এবং তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

শুক্রবার রাতেই ইরান ইসরাইলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। অন্তত দুই দফার এই হামলায় রামাত গান শহরের একটি ভবনে আঘাত হানে মিসাইল। এই ঘটনায় একজন ইসরায়েলি নারী নিহত এবং অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

পাল্টা হামলার পর তেহরানে শত শত নাগরিক জাতীয় পতাকা হাতে আনন্দ মিছিল করেছে। একে "প্রতিরোধের জবাব" বলে অভিহিত করেছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সংযমের আহ্বানকে 'অযৌক্তিক' বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, ইসরায়েলের হামলা ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের জবাব হবে ‘দৃঢ় ও উপযুক্ত’।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “যুদ্ধ বন্ধের এখনই সময়।” তিনি উভয় পক্ষকে ‘উত্তেজনা প্রশমনে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর’ আহ্বান জানান। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

ইরানি সংবাদ সংস্থা তাসনিম দাবি করেছে, তারা দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং একটি বিমানের নারী পাইলটকে আটক করেছে। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এই দাবিকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

জেরুজালেমে বিস্ফোরণ ও ড্রোন উড়ার খবরও পাওয়া গেছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাতজ বলেন, “ইরান বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে সীমা অতিক্রম করেছে। এর উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।”

এখন দুই দেশের মধ্যে পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে