বাজেটের মূল লক্ষ্য ট্রাম্প ও আইএমএফকে খুশি করা: আনু মুহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৪ জুন, ২০২৫, ০৩:২১ পিএম
বাজেটের মূল লক্ষ্য ট্রাম্প ও আইএমএফকে খুশি করা: আনু মুহাম্মদ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘ট্রাম্প প্রশাসন ও আইএমএফকে খুশি করার বাজেট’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তার ভাষায়, এবারের বাজেট ‘দুই পায়ে দাঁড়ানো’—এক পায়ে আইএমএফ, অন্য পায়ে ট্রাম্প প্রশাসন। এই দুই আন্তর্জাতিক শক্তিকে তুষ্ট করতে গিয়ে সরকার দেশীয় শিল্প ও অর্থনীতির ওপর কঠিন চাপ সৃষ্টি করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট: দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “আইএমএফের শর্তে স্থানীয় ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভ্যাট অব্যাহতি কমিয়ে আনা হয়েছে। কর অবকাশ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এমনকি গৃহস্থালির নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ওপরও কর আরোপ করা হয়েছে। করোনার সময় ব্যাপক বিস্তৃত অনলাইন ব্যবসার ওপরও নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও কর বসানো হয়েছে।”

তার ভাষায়, “আইএমএফ চাইছে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে, আর সরকার সেটা বাস্তবায়ন করছে ভ্যাট বাড়িয়ে। যার প্রভাব পড়ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ওপরেই।”

সভায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব নিয়েও বক্তব্য রাখেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্ক নীতির পর বাংলাদেশ তড়িঘড়ি করে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। এবারের বাজেটে যুক্তরাষ্ট্রের ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে, ৬৫টি পণ্যের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে, ৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে, ৪৪২টি পণ্যের শুল্ক কমানো হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধাস্ত্র আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে শূন্য করা হয়েছে, পেট্রোলিয়াম ও এলএনজি আমদানির ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ দেশি শিল্পের জন্য ভ্যাট ও করের বোঝা বেড়েছে। এতে করে দেশ আরও আমদানি নির্ভর ও ঋণনির্ভর হয়ে পড়ছে।”

আনু মুহাম্মদ বলেন, “বাজেটে যেসব বড় সমস্যা আছে, সেগুলো দূর না করলে জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। ২২ জুন বাজেট অনুমোদনের আগে সরকারের উচিত বাজেটের ত্রুটিগুলো সংশোধন করা।” তিনি জানান, বাজেটে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স চাপানো হলেও, মার্কিন কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

সরকারের মেগা প্রকল্প নির্ভরতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “রূপপুর, রামপাল, মাতারবাড়ির মতো বিলাসী ও পরিবেশবিনাশী প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পদক্ষেপ সরকার নেয়নি। অথচ জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো গেলে দেশীয়ভাবে কম দামে গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হতো।”

তিনি সংস্কার কমিশনের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, “কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের অনাগ্রহ প্রমাণ করে, সেগুলো যেন কেবল অলংকার হয়ে আছে।”

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম রসুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহা মির্জা, লেখক কল্লোল মোস্তফা, চিকিৎসক ডা. হারুন অর রশীদ ও গবেষক মাহতাব উদ্দীন আহমেদ।

গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা জনগণের মধ্যে রয়েছে, বাজেটে তার প্রতিফলন নেই বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, “সম্পদ এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কাছ থেকে কিছু লোকের হাতে জমা হচ্ছে। বাজেটের প্রবণতা তাতে কোনো পরিবর্তন আনেনি।”

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে