সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ফের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ফের বিক্ষোভ

ঈদুল আজহার ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে আবারও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে সচিবালয় এলাকা। কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ এবং স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে তাদের অসন্তোষ এবং দাবিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন।

সোমবার (১৬ জুন) সকাল ১১টার পর সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় কর্মচারীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এরপর তারা মিছিল নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের নিচে সমাবেশ করেন। দুপুর পৌঁনে ১টার দিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। কর্মসূচি অনুযায়ী, পরদিন মঙ্গলবারও সচিবালয়ে একইভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন নেতারা।

এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম, মো. বাদিউল কবির ও কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম। আন্দোলনকারীরা মিছিল ও সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন—

‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’,

‘ফ্যাসিবাদী কালো আইন মানি না, মানবো না’,

‘সচিবালয় জেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’।

সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “সরকার আমাদের সঙ্গে সাপ-লুডু খেলা খেলছে। আমরা মহার্ঘভাতা, পদ-পদবি পরিবর্তন, সচিবালয় ভাতা চেয়েছি। অথচ তার বদলে সরকার ‘অভিন্ন নিয়োগবিধি’ এবং এখন ‘কালো আইন’ চাপিয়ে দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই জারি করা হয়েছে। অথচ প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট বলা আছে—অধ্যাদেশ জারির আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমাদের কেউ এ পর্যন্ত কোনো আলোচনার আমন্ত্রণ জানায়নি। ফলে এই অধ্যাদেশ জারির পেছনে সরকার পক্ষের অসৎ উদ্দেশ্য আছে বলেই মনে হচ্ছে।”

নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন করবো, সচিবালয়ের গেট বন্ধ করবো। আজ রোদে পুড়ে আমরা আন্দোলন করছি, আপনারা এসিতে বসে আইন করছেন। এই বৈষম্য আমরা আর মেনে নেব না।”

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন পায়। এরপর ২৫ মে এটি জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে একজন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে। এই বিধানকে নিবর্তনমূলক ও 'কালো আইন' হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।

এ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে তারা ২৪ মে থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছেন, যার মধ্যে রয়েছে—কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিল, এবং সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান।

চাপের মুখে সরকার ৪ জুন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। সোমবার বিকেলে এই কমিটির প্রথম বৈঠক বসেছে। কমিটির সুপারিশ না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হলেও আন্দোলনকারী কর্মচারীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।

নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ১৬ জুনের পরও সরকার যদি আলোচনার আমন্ত্রণ না জানায় এবং অধ্যাদেশ বাতিল না করে, তবে আন্দোলনের ধরন আরও তীব্র হবে। দাবি পূরণ না হলে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা মিছিলসহ আরও বড় কর্মসূচির হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে