ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত যখন চরমে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে তাঁর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল—ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা চালানো হবে কি না।
মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার (১৭ জুন)। প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট স্থায়ী বৈঠকে ইরানে হামলা নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। কেউ সরাসরি হামলার পক্ষে থাকলেও, কেউ-কেউ সতর্ক ও কূটনৈতিক সমাধানের পরামর্শ দেন। এ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
বৈঠকে আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইরানের ফোরদো শহরে অবস্থিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা মাটির অনেক নিচে অবস্থিত। মার্কিন সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি ধ্বংস করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ধরনের বাঙ্কার-ধ্বংসী বোমা ব্যবহার করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট না হলেও, সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তারা সরাসরি সামরিক জড়িত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত তিন দিনে অন্তত ৩০টি মার্কিন সামরিক ট্যাংকার বিমান ইউরোপে পাঠানো হয়েছে, যা যুদ্ধবিমান ও বোমারু বিমানে আকাশপথে জ্বালানি সরবরাহে ব্যবহৃত হয়।
বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফোনে কথা বলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে। যদিও তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একাধিক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ' দাবি করেছেন। এর জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কঠোর বার্তা দিয়েছেন, 'জায়নবাদীদের সঙ্গে কোনো আপস নয়। ইরান কখনোই সমঝোতা করবে না।'
অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, গত পাঁচ দিনে তারা ইরানের সামরিক ও পরমাণু খাতে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। নিহত হয়েছেন ইরানের সেনাপ্রধান, আইআরজিসি (ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড) প্রধান এবং কয়েকজন শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানী। ধ্বংস হয়েছে অন্তত তিনটি পরমাণু স্থাপনা। আরও ১০টি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
তিনি সরাসরি আয়াতুল্লাহ খামেনিকেও হত্যার হুমকি দিয়ে বলেন, 'ইরানের প্রতিবেশী দেশের একনায়কের (সাদ্দাম হোসেন) পরিণতি যেন তিনি মনে রাখেন।'
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়েই যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে সই হওয়া ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসে। এরপর থেকে ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম জোরদার করে। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর মতে, ইরান এখন এমন পর্যায়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একেবারে দোরগোড়ায়।
চলমান এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে তা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।