‘সরকার সেবায় বাধা দিচ্ছে, দায় চাপাচ্ছে আমাদের ওপর’ — ইশরাক

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ১৮ জুন, ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম
‘সরকার সেবায় বাধা দিচ্ছে, দায় চাপাচ্ছে আমাদের ওপর’ — ইশরাক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ নিতে না পারার ইস্যুতে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে সেবা ব্যাহত করার’ অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তাঁর ভাষ্য, সরকার একদিকে নাগরিক সেবা কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে সেই ব্যর্থতার দায় তাঁদের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

বুধবার (১৮ জুন) নগর ভবনে কর্মচারী ও ‘আমরা ঢাকাবাসী’ ব্যানারের চলমান আন্দোলনে অংশ নিয়ে একাধিক বক্তব্যে তিনি সরকারের ভূমিকা ও মনোভাবের কড়া সমালোচনা করেন। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কিছু কর্মকাণ্ডকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যাচার বলে আখ্যা দেন।

নগর ভবনের আন্দোলনকারীদের সামনে দেওয়া বক্তব্যে ইশরাক অভিযোগ করেন, “স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও সচিব করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের মৌলিক নাগরিক সেবা— যেমন জন্ম নিবন্ধন ও নাগরিক সনদে স্বাক্ষর না করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি ন্যক্কারজনক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং স্পষ্টভাবে জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করার সামিল।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার সেবায় বিঘ্ন ঘটিয়ে সেই দায় আমাদের ওপর চাপানোর জন্য নানা রকম পরিকল্পিত নাটক করছে।”

এক পর্যায়ে ইশরাক বলেন, “গতকাল উপদেষ্টা বলেছেন, আমি নাকি আইন ভেঙেছি, ফৌজদারি অপরাধ করেছি। যদি সত্যিই তাই হয়ে থাকে, তাহলে সরকারে থেকেও কেন মামলা করেননি? কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিচ্ছেন না?” এরপরই যুক্ত করেন, “আমরা ভয় পাই না। খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে ১৭ বছর ধরে লড়ছি— জেল, গুম, নির্যাতন সবই সহ্য করেছি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।”

বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, “আন্দোলন চললেও জরুরি সেবা সচল রাখা হয়েছে। সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম— সে জন্যই আমরা মশকনিধন কার্যক্রম শুরু করেছি, যাতে নাগরিক দুর্ভোগ না হয়।” এ লক্ষ্যে বুধবার তিনি নগর ভবনে মশকনিধন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং পরে প্রতিটি ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজারদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেন, “সরকারের নিযুক্ত উপদেষ্টারা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের আন্দোলনকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছেন। তাঁরা মিথ্যা বলছেন যে এখনো আইনি জটিলতা আছে। অথচ দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে বিষয়টি আগেই নিষ্পত্তি হয়েছে।”

তিনি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে ‘অযোগ্য ও মূর্খ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এমন উপদেষ্টারা আমাদের সঙ্গে কথা বলবে, এটাও অপমানজনক।”

এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগে ইশরাক বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা নগর ভবনের কর্মকর্তাদের ফোন করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করতে বলেন, যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। তাঁর ভাষায়, “এই ব্যর্থতা আমাদের কাঁধে চাপিয়ে সরকার জনগণের সামনে আমাদের হেয় করতে চায়।”

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর চলতি বছরের ২৭ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করলেও এখনও পর্যন্ত তাঁকে শপথ পড়ানো হয়নি। সরকার আদালতের নিষ্পত্তির পরও আইনি জটিলতার কথা বলে শপথ অনুষ্ঠান থেকে বিরত রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘আমরা ঢাকাবাসী’ ব্যানারে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচি এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে। ইশরাক স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, আন্দোলন চলবে, নগর ভবনের ফটকে ‘তালা ঝুলবেই’— এটি এখন তাঁদের প্রতীকী প্রতিবাদ।

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “সরকার গণঅভ্যুত্থানের কথা বললেও মানুষের দাবি, আদালতের রায় এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করছে আমাদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য।”

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে