বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার ও বায়ুমান উন্নয়নের লক্ষ্যে দুটি বড় প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে দেশে শিল্প উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও আর্থিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই অর্থায়ন অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ বুধবার (১৮ জুন)। পরদিন বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই অর্থায়নের আওতায় রয়েছে দুটি পৃথক প্রকল্প—
১. জ্বালানি খাত নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্প (৩৫০ মিলিয়ন ডলার)
২. বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প (২৯০ মিলিয়ন ডলার)
বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, “জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুমান উন্নয়ন বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পদ্বয় উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থানে সহায়ক হবে।”
রাষ্ট্রমালিকানাধীন পেট্রোবাংলার জন্য অর্থায়ন সহজতর করতে ‘জ্বালানি খাত নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় আইডিএ গ্যারান্টি ব্যবহার করে সাত বছরে প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি মূলধন সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে, যা এলএনজি আমদানিতে ব্যবহৃত হবে।
বর্তমানে দেশের মোট গ্যাসের এক-চতুর্থাংশ এলএনজি আমদানি থেকে আসে এবং এর ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। ফলে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায়, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয়বহুল স্পট মার্কেটের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার ওলায়িনকা এডেবিরি বলেন, “এই প্রকল্প নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়ক হবে, যা অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।”
‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প’-এর আওতায় বায়ুমান পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক, যানবাহনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ, এবং পরিবেশবান্ধব বাস চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ঢাকার বায়ুতে ফাইন পার্টিকুলেট ম্যাটারের পরিমাণ নির্দেশিত মাত্রার ১৮ গুণ বেশি। এই প্রকল্পে—
• ৪০০টি পুরোনো ডিজেলচালিত বাস সরিয়ে ইলেকট্রিক বাস চালু করা হবে।
• পাঁচটি নতুন যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র নির্মাণ এবং দুটি কেন্দ্র আধুনিকীকরণ করা হবে।
• ২০টি মোবাইল নির্গমন ইউনিট মোতায়েন করা হবে।
এই উদ্যোগের ফলে প্রতি বছর আনুমানিক ২ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন পিএম ২.৫ নির্গমন কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার আনা লুইসা গোমেস লিমা বলেন, “এটি বাংলাদেশের বায়ুমান উন্নয়নের প্রথম বড় প্রকল্প। যেহেতু বাতাস সীমান্ত মানে না, এই প্রকল্প আঞ্চলিক সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদানে সহায়ক হবে।”
এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি প্রয়োগ, উৎপাদন খাতে স্থিতিশীলতা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য মানদণ্ডে বায়ুমান উন্নয়ন ঘটবে বলে বিশ্বব্যাংক আশা করছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। এখন পর্যন্ত দেশটি থেকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও স্বল্পসুদে ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ আইডিএ’র অন্যতম বৃহৎ সহায়তাপ্রাপ্ত দেশ।