ভালো খবরের আশায় এক দিনের বিরতি, আন্দোলনের গতি কমেনি সচিবালয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৩ জুন, ২০২৫, ০৪:৪২ পিএম
ভালো খবরের আশায় এক দিনের বিরতি, আন্দোলনের গতি কমেনি সচিবালয়ে

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ–২০২৫ বাতিলের দাবিতে টানা কর্মসূচি চালিয়ে আসা সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘ভালো খবরের আশায়’ সোমবার (২৩ জুন) এক দিনের জন্য আন্দোলনে বিরতি দিয়েছেন। তবে আন্দোলনের গতি শ্লথ হয়নি। বরং আগামী দিনের বৃহত্তর কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী দিনে ঢাকার বিভিন্ন দপ্তরে কর্মচারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে গণসংযোগে নামার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।

সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরিতে কর্মবিরতি পালন করেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। বক্তব্য, মতবিনিময় ও পরিস্থিতি পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে দুই ঘণ্টার এ কর্মসূচি শেষে তারা নামাজ আদায় করতে চলে যান।

ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর ঘোষণা দেন, “আগামীকাল (মঙ্গলবার) আমরা সচিবালয়ের বাইরের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে গণসংযোগ করব। সবাইকে নিয়ে একযোগে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেজন্য একদিনের বিরতি দরকার ছিল।”

তিনি বলেন, “সরকার আমাদের কথাই শুনছে না— এমনটা বলা যাবে না। কিছু বিষয় কৌশলগত কারণে প্রকাশ করা যায় না। আজই একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের বৈঠক রয়েছে। সেখান থেকে ভালো কিছু আসতে পারে বলে আমরা আশা করি।”

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আরেক কো-চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, “সরকার এখনো সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে এর ফল তাদের ভোগ করতে হবে। সাবেক কর্মকর্তাদের জনগণ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, সবাই দেখেছেন। যারা এখন ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন, তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন।”

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, “কেয়ারটেকার সরকারের কাজ নীতিনির্ধারণ নয়। আপনারা যেটুকু করেছেন, সেখানেই থামেন।”

নেতারা অনুরোধ করেন, কেউ যেন ব্যক্তিগতভাবে নেতিবাচক বক্তব্য না দেন এবং আগামী দিনের সাফল্যের আশায় সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকেন।

গত ২৫ মে সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে জানায়, চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে কোনো সরকারি কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে। এর প্রতিবাদে সচিবালয়ের কর্মচারীরা আন্দোলনে নামেন এবং কোরবানির ঈদের ছুটির পর ১৫ জুন থেকে লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে অধ্যাদেশ পর্যালোচনার জন্য আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানও সদস্য হিসেবে রয়েছেন। ওই কমিটি দু’টি সভা করলেও এখনো কোনো সুপারিশ দেয়নি।

আন্দোলনকারী নেতাদের মতে, অন্তত ৫০টি দপ্তরের কর্মচারী সংগঠন তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌথ আন্দোলনে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছে। তাঁদের দাবি, আন্দোলন শুধু সচিবালয়ের কর্মচারীদের নয়, পুরো সরকারি কর্মপরিষেবার অধিকার রক্ষার লড়াই।

একজন কর্মচারী নেতা হাসনাত বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা যুদ্ধে আছি, সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। উপদেষ্টা বা সচিবদের দপ্তরের কেউ আন্দোলনে আসছেন না, তাদের বাধ্য করতে হবে। এই আন্দোলন কাউকে ছাড়া হবে না।”

নেতারা জানিয়েছেন, অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে, এবং প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচিও দেওয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে