২০০৯ সালের পিলখানা ট্র্যাজেডির পর চাকরিচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিচার ও পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসা এই সদস্যরা এবার প্রধান উপদেষ্টা বা তাঁর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। সাক্ষাৎ না হলে মঙ্গলবার (২৪ জুন) যমুনা ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। প্রায় ৪৫ মিনিট সড়ক অবরোধ চলায় আশপাশের এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনকারীদের সংগঠন ‘বিডিআর কল্যাণ পরিষদের’ সভাপতি মো. ফয়জুল আলম সবুজ সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, মঙ্গলবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হবে। যদি সকাল ১০টার মধ্যে আমাদের কিছু না জানানো হয়, আমরা যমুনা টিভি কার্যালয় ঘেরাও করব।”
চাকরিচ্যুত ও কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের ন্যায়বিচারের দাবিতে সংগঠিত এই আন্দোলনের সূত্রপাত নতুন নয়। এর আগে ৭ এপ্রিল সচিবালয়মুখী মিছিলে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান দিয়ে ছত্রভঙ্গ করা হয় আন্দোলনকারীদের। একই দাবিতে তাঁরা বিজিবি সদর দপ্তরের সামনেও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন।
গত ২২ জুন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে তাঁদের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখনই পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা আসার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির পিলখানা বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। ঘটনার পর বিডিআরের নাম ও গঠন কাঠামো পরিবর্তন করে নতুনভাবে বিজিবি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ঘটনার বিচার হলেও অনেক বিডিআর সদস্য মনে করেন, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন এবং ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এই ঘটনার পুনঃতদন্তের দাবি জোরালো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত এই কমিশনের কার্যক্রমের বিষয়ে সুস্পষ্ট অগ্রগতি জানা যায়নি।
আন্দোলনকারী মো. ফয়জুল আলম সবুজ বলেন, “নতুন সরকার আসার পর আমরা ভেবেছিলাম, ন্যায্য বিচার পাব। কিন্তু এখনো আমাদের মুক্তি হয়নি, বরং আরও অবহেলা দেখতে পাচ্ছি।”
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম জানান, “আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছি এবং তাদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।”
পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনার পর প্রায় এক যুগ কেটে গেলেও বিচারের দাবিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের আন্দোলন থেমে নেই। এবারও নতুন সরকারের আমলে নতুন করে আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা। দাবি একটাই—সুষ্ঠু বিচার ও পুনর্বহাল। এখন দেখার বিষয়, মঙ্গলবারের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে কোনো সাড়া আসে কি না, নাকি আন্দোলনকারীরা তাঁদের ঘোষিত ‘যমুনা ঘেরাও’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে এগিয়ে যান।