একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
রোববার (২২ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা থেকে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাঁকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁকে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় গলায় জুতার মালা পরানো হয় এবং কিছু ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। পুলিশের পোশাক পরা একজন সদস্যকেও সেই সময় সেখানে উপস্থিত দেখা যায়। পরে তাঁকে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ হেফাজতে নেয়।
সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাঁকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এ সময় তাঁর মাথার হেলমেট ও হাতের হাতকড়া খুলে ফেলা হয়। তাঁকে সালাম জানান আইনজীবীরা, আর তিনিও হাসিমুখে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার মামলার তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘নূরুল হুদা নিশিরাতের ভোটের কারিগর। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন তিনি। নির্বাচন প্রহসনে রূপ দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে ভূমিকা রেখেছেন।’
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে বলেন, নূরুল হুদার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো জামিনযোগ্য ও আইনত ত্রুটিপূর্ণ। তবে শুনানি শেষে বিচারক চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন তিন সিইসি—কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা, কাজী হাবিবুল আউয়াল—সহ মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়:
১. ২০০৯ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
২. ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা, হুমকি, গ্রেপ্তার ও হয়রানির মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিতে বাধা দেওয়া হয়।
৩. কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের সময় ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়। বিএনপিকে মাঠে নামতেই দেওয়া হয়নি, গায়েবি মামলায় নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়।
৪. সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন নূরুল হুদা।
রিমান্ড আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কে এম নূরুল হুদা কার নির্দেশে, কার ইন্ধনে এবং কী বিনিময়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, তা উদ্ঘাটনের জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।
এই মামলায় আরও যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের মধ্যে আছেন—
• সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
• পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, জাবেদ পাটোয়ারী ও শহিদুল হক
• ডিএমপির সাবেক কমিশনার বেনজীর আহমেদ
• স্পেশাল ব্রাঞ্চের সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম
• এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধানেরা
বিএনপির ভাষ্য মতে, এঁরা সবাই নির্বাচনী কারচুপির সঙ্গে জড়িত এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণে সহায়তা করেছেন।
কে এম নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন। তাঁর নেতৃত্বে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।