ভারত অহংকার করে নিজেদেরকে প্রভু মনে করে: রিজভী

এফএনএস অনলাইন:
| আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম | প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০২:০০ এএম
ভারত অহংকার করে নিজেদেরকে প্রভু মনে করে: রিজভী

বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় কর্ণফুলি গার্ডেন সিটির সামনে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বললেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত অহংকার করে নিজেদেরকে প্রভু মনে করে। তা না হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৬ ডিসেম্বরের দিন কেন বললেন, ১৬ ডিসেম্বর হচ্ছে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়? তিনি তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে, বাংলাদেশের স্বাধীন ভূখণ্ডকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে, ছোট করলেন, অবজ্ঞা করলেন।

রিজভী আরও যোগ করে বলেন, যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা; লুঙ্গি কষে বেঁধে নদীনালা, খাল-বিল, জঙ্গল থেকে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছে তারা। ভারত বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছে। তাহলে এটা বাংলাদেশের বিজয় দিবস না হয়ে ভারতের বিজয় দিবস হয় কি করে? তার মানে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করতে চান। আমাদের যে ৩০ লাখ মানুষ অকাতরে জীবন দিলো, সেটিকে তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে চান। আমেরিকা যখন যুদ্ধ করছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, তখন ফ্রান্স আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল সেই ১৭৭৬ সাল থেকে ১৭৮১ সাল পর্যন্ত তাদের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত। কই ফ্রান্স তো বলে না, এটা তাদের বিজয় দিবস!

তিনি বলেন, গোটা বিশ্ববাসী জানে, বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা তাদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিলো; ওই জীবনের কি কোনো মূল্য নেই, মোদি বাবু? আপনি বলছেন এটা আপনাদের বিজয় দিবস, এটা ভারতের বিজয় দিবস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এমএ জি ওসমানী সাহেব একটি কথা বলেছিলেন, ভারত যদি আমাদের সহয়োগিতা নাও করতো তারপরও বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। কারণ যখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কোনো রাজনীতিবিদ নিতে পারেননি সেই সময়ে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে একজন তরুণ মেজর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যে তরঙ্গ তৈরি করেছিলেন, সেই তরঙ্গে অন্যান্য সেনা অফিসাররা বাংলাদেশের মানুষরা উদ্বুদ্ধ হন এবং তারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আজকে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মতিউর রহমান, হামিদুর রহমান এই যে বীরশ্রেষ্ঠ, তারা কীসের জন্য জীবন দিয়েছেন? তারা কি ভারতের বিজয়ের জন্য জীবন দিয়েছেন? নাকি তাদের নিজের দেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যুদ্ধ করেছেন?

বিএনপির এ নেতা বলেন, বিগত ১৬ বছর একমাত্র দিল্লি ছাড়া শেখ হাসিনাকে দুনিয়ার কোনো দেশ সমর্থন করেনি। এই কারণেই আজকে তাদের মনে খুব ব্যথা। তাই প্রতিদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন।

রিজভী বলেন, ভারত মনে করে চিরদিন আমরা তাদের গোলাম হয়ে থাকবো, অনুগত হয়ে থাকবো। আমি দিল্লির নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করেন, তাহলে ভারত থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এতো অপপ্রচার কেন? শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে এই মনোকষ্টে আপনারা অসংখ্য মিডিয়ায় প্রতিদিন বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য রাখছেন। আপনাদের এতো প্রেম কেন শেখ হাসিনার বিষয়ে? এটারও কারণ আছে। ভারতের বিএসএফ দুইদিন তিনদিন পরপর আমাদের সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করে। একমাত্র শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এটার প্রতিবাদ করে। দিল্লির সিংহাসনে যারা আছেন তারা বলেন, আমরা অন্যায় করি, বাংলাদেশিদের হত্যা করি, শেখ হাসিনা তো টু শব্দ করে না। এইরকম প্রধানমন্ত্রীই তো আমাদের দরকার। সেই কারণে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হোক না হোক ও যত বড় ফ্যাসিস্টই হোক, শেখ হাসিনাকেই ক্ষমতায় রাখতে হবে।

রিজভী আরও বলেন, সব শিষ্টাচার, সব রাষ্ট্রাচার, সব কূটনীতিকে উপেক্ষা করে আপনাদের পররাষ্ট্র দপ্তর, আপনাদের রাজনৈতিক নেতারা প্রতিদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা, মিথ্যা কথা বলে, অপতথ্য প্রচার করে এক ধরনের বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন। কিন্তু সারা দুনিয়ার মানুষ জানে বাংলাদেশ কত সম্প্রীতির দেশ, কত শান্তির দেশ। যারা আমাদেরকে ঘৃণা করে যারা আমাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে তাদেরকে বলে রাখি, এই বিষোদ্গার যতদিন করবেন, আমাদের প্রতিবাদ এবং আমাদের যে রাজনৈতিক প্রতিরোধ আমরা করে যাবো।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে