কক্সবাজারের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মাওলানা আব্দুল মান্নান (৪২) নামে এক মাদরাসা শিক্ষক নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আরশি (২৭) ও চার বছর বয়সী ছেলে শিহাম গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চকরিয়া উপজেলার বরইতলি এলাকার "বুড়ির দোকান" নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মাওলানা মান্নান পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া এ.এস. আলিম মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাহ ইসলামপুর ধর্মের ছড়া জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ভোলাইয়াঘোনা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষক মান্নান সিএনজি অটোরিকশাযোগে স্ত্রী ও সন্তানসহ ঈদগাহের নিজ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে বরইতলি এলাকায় পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ওই সময় অটোরিকশাটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ভারী ডাম্পার ট্রাকের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। দুর্ঘটনায় তিনজনই গুরুতরভাবে আহত হন।
স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টার দিকে শিক্ষক আব্দুল মান্নানের মৃত্যু হয়।
মাওলানা মান্নানের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি ছিলেন ধর্মপ্রাণ, বিনয়ী ও সমাজসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী একজন মানুষ। শুধু একজন শিক্ষক হিসেবেই নয়, একজন ইমাম, ধর্মীয় আলোচক ও তরুণ প্রজন্মের নৈতিক দীক্ষাদাতা হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। প্রতি বৃহস্পতিবার তিনি পেকুয়া থেকে নিজ এলাকায় গিয়ে জুমার নামাজ পড়াতেন এবং ধর্মীয় আলোচনা করতেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় ফের সামনে এলো দেশের সড়ক অব্যবস্থাপনা ও দুর্ঘটনার ভয়াবহ বাস্তবতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত স্থানে পার্কিং না করে সড়কের পাশে ভারী যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখা এবং অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনা এই ধরনের দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল অবিলম্বে দুর্ঘটনাস্থলে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্থায়ী নজরদারি ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি নিহত শিক্ষকের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মাওলানা আব্দুল মান্নান তিন সন্তানের জনক ছিলেন। তাঁর এক সন্তান এখনও শিশু। স্ত্রীর অবস্থাও সংকটাপন্ন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। শিক্ষক মান্নানের অকাল মৃত্যুতে তাঁর সহকর্মী, শিক্ষার্থী এবং এলাকার সাধারণ মানুষ এক অভিভাবক হারালেন।
একজন মানুষ হারানো মানে শুধু একটি জীবন নয়, হারিয়ে যাওয়া একটি মূল্যবান আদর্শ। মাওলানা মান্নানের মৃত্যু আমাদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিল-নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি নয়, জরুরি বাস্তবতা।