বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপের প্রভাবে গত চারদিন ধরে বরিশালে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে নগরীর নবগ্রাম রোড, বগুড়া রোড, অক্সফোর্ড মিশন রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলিগলিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে বুধবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ১৬০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চার দিন ধরে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে শহরের নিন্মাঞ্চল থেকে উপকূলীয় এলাকা পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে হাঁটু সমান পানি জমে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থী ও অফিসগামীদের বাসায় আটকে পরতে হয়েছে। ফলে জনজীবনে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পাশাপাশি আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বরিশালের নদী বন্দরকে ১ নম্বর ও লঘুচাপ ও ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতে রাখা হয়েছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলীয় এলাকায় সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত চারদিনের টানা বৃষ্টিতে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ আশেপাশের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। নগরীর উল্লেখযোগ্য অধিকাংশ সড়ক এখন পানির নিচে। নগরীর নবগ্রাম রোড, বটতলা, অক্সফোর্ড মিশন রোড, মুন্সির গ্যারেজ, গোরস্থান রোড, হালিমা খাতুন স্কুল সংলগ্ন গলি, সাগরদী হাউজিং, বিএম স্কুল রোড, কালিবাড়ী রোড, ব্রাউন্ড কম্পাউন্ড, কালুশাহ সড়কসহ নগরীর অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সচেতন নগরবাসীরা জানিয়েছেন, একটানা ভারি বর্ষণে নগরীতে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে মশার উপদ্রব বাড়ার পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পরেছে সাধারণ জনগন।
তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে \ মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ বিরাজমান থাকায় বরিশাল বিভাগের তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ নদীসমূহে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ার বিরাজমান রয়েছে। বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঝালকাঠি জেলার বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার, ভোলা জেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি তজুমদ্দিন উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার এবং পটুয়াখালীর পায়রা নদীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তাজুল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদী সমূহের ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের গেজ স্টেশনের পানির উচ্চতা পর্যালোচনা করে। এসব স্টেশনের দেওয়া তথ্যের পর্যালোচনায় তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বাকি ১৬টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চারদিনের টানা বৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে যাচ্ছে। পানি নামতে শুরু করলে এসব এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।