ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ক্রসফায়ারের মুখ থেকে ফিরে আসা জামায়াত নেতা অধ্যাপক মাওলানা আলী আছগর এখন দলের এমপি প্রার্থী। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৩ (ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও ফরিদপুর) আসন থেকে নির্বাচন করবেন। দলীয় মনোনয়ন লাভের পর থেকেই তিনি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এলাকায় সজ্জন হিসেবে পরিচিত মাওলানা আলী আছগর পাবনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী তরবিয়ত সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাড়ি উপজেলার কলকতি গ্রামে। তিনি স্থানীয় শরৎনগর ফাজিল মাদ্রাসায় আরবী বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
১৯৮৫ সালে দলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। এরপর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি হন। ১৯৯৯ সালে জামায়াতের রুকন হন। পরবর্তীতে ২০০০ সালে তিনি ভাঙ্গুড়া উপজেলা জামায়াতের আমির নির্বাচিত হন।
জানা গেছে-দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাকে বহু জেল-জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তাকে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় সাত বার কারাবরণ করতে হয়েছে। এসময় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় ৯ টি মামলা। এসব মামলায় তিনি প্রায় দুই বছর জেলজীবন কাটান তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে বিশেষ আইনে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। তিন মাস কারাভোগের পর জামিন নিয়ে বের হতেই ডিবি পুলিশ পরিচয়ে জেলগেট থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় পাবনা শহরে অবস্থিত অন্ধকার আয়না ঘরে সাত দিন তাকে বন্দি করে রাখা হয়। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে ক্রসফায়ারে হত্যার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয় পাবনার পদ্মার চরে।
জামায়াত নেতা অধ্যাপক মাওলানা আলী আছগর জানান, অন্ধকার আয়না ঘরে তাকে সাত দিন আটকে রাখা হয়।এসময় তার দু'হাত পেছন দিক থেকে বাঁধা ছিল।সবসময় পায়ে পরিয়ে রাখা হতো ডান্ডাবেরি। অজু, গোসল কিছুই করতে দেওয়া হয়নি তাকে। নামাজের সময় তিনি তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করতেন।মাঝে মধ্যে সামান্য খাবার খেতে দেওয়া হতো। কিন্তু তা ছিল খাবারের অনুপযোগী ।
তিনি জানান, আয়না ঘরের শেষ দিন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে পুলিশ তাকে সাদা একটি মাইক্রোবাসে তোলেন। সবার হাতেই ছিল কাটা বন্দুক। এরপর ক্রসফায়ারের উদ্দেশ্যে তাকে নেওয়া হয় পাবনার পদ্মার চরে। সেখানে চলে তাকে ক্রসফায়ারে হত্যার প্রস্তুতি। তিনি যখন বুঝতে পারলেন আজকের রাতটাই তার জীবনের শেষ দিন। তাই বিচলিত না হয়ে বার বার স্মরণ করতে থাকেন মহান আল্লাহকে। এ অবস্থায় নিজেকে প্রস্তুত করলেন শাহাদতের মৃত্যুর জন্য আর মুখে জপতে থাকেন দোয়া-দরুদ।
অন্যদিকে সামান্য দূরে পুলিশ সদস্যরা দীর্ঘক্ষণ কারো সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। কথা শেষ করে ক্রসফায়ার না দিয়েই তাকে ফিরে নিয়ে যায় সেই আয়না ঘরে। এর পরদিন তাকে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় পাবনা কারাগারে।
উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মহির উদ্দিন বলেন, আলী আছগর একজন মজলুম আলেম। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় তিনি অনেক জুলুমের শিকার হয়েছেন। বহুবার জেল খেটেছেন। শুধু মাত্র দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করার কারণে একজন নিরাপরাধ আলেমকে ক্রসফায়ারে হত্যা চেষ্টা একটি জঘন্য অপরাধ। জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত।