ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান ওয়াশ ব্লকের কাজে ব্যাপক ও নিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার ১৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৮ টি বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লকে নির্মাণ কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্টান নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করায় চরম বিপাকে পড়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত মাত্র ১১ টি বিদ্যালয়কে ওয়াশ ব্লকের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি গুলোতে নির্মাণ কাজ চলছে অত্যান্তধীর গতিতে। একই সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে এ কাজে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যাবহারের অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিরুদ্ধে।
কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে ওয়াশ ব্লকের কাজ চলমান। সেখানে সিডিউলে থাকা হেবী প্লাস্টিক ডোরের পরিবর্তে ওয়াশ রুমে লাগানো হচ্ছে টিনের পাতের দরজা এবং লাগানো হয়েছে নিম্নমানের ক্রপসিকল দরজা। এমনকি দ্বিতল ওয়াশ ব্লকের ভবনে প্লাস্টারের কাজ করার পর তা পানি দিয়ে ভেজানো হয়নি।
বেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাপলা পারভীন বলেন,ওয়াশ ব্লকের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। ঠিকাদার নিম্নমানের ইট এনেছিল কাজ করার জন্য। আমরা নিম্মমানের ইট তাকে কাজে লাগাতে দেয়নি।অনিয়মের ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জেসমিন আরাকে জানালে তিনি মেজাজ দেখিয়ে বলেন, এই ম্যাডাম, এটা কি আপনার বাড়ির তা, টিনের দরজা না নিলে লিখিত দেন।ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজের ভাই ভাই ইলেকট্রিক স্টোর', মাগুরা নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের স্বত্বাধিকারী সেলিম হোসেন বলেন,নির্মাণ কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ সত্য নয়। আমি মাত্র ৬ টি বিদ্যালয়ে কাজ করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আমি টিনের শীটে তৈরি দরজা লাগিয়েছি। আপনি উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রাইমারি স্কুল গুলোতে ওয়াশ ব্লকের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বিদ্যালয় গুলোতে লেখাপড়ার পরিবেশ দারুণ ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এর উপর আবার নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। নির্মাণ কাজে মানা হচ্ছে না নির্ধারিত সিডিউল মোতাবেক কাজ। যে সব বিদ্যালয় গুলোতে ওয়াশ ব্লকের কাজ চলমান ওইসব বিদ্যালয়েহে একদিকে অস্থায়ী ওয়াশ রুম ব্যাবহার করতে হচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যালয়ের শ্রেনিকক্ষ কিংবা বারান্দায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। এতে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। ওয়াশ ব্লক নির্মাণে অনিয়মের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবগতি করেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলেও তিনি যোগ করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলি জেসমিন আরা বলেন, ওয়াশ ব্লকে টিনের শীটের দরজা লাগানোর অনুমতি কর্তৃপক্ষ দিয়েছে। বর্তমানে ৫২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ চলমান রয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার এবং ঠিক কবে নাগাদ কাজ সম্পন্ন হবে এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা বলেন, শিডিউলে উল্লেখিত মালামাল ব্যবহার না করে ওয়াশ ব্লকের কাজে অন্য মালামাল ব্যবহার করার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেয়। প্রায়ই অভিযোগ আসে টাইলস লাগানোর পরে অনেক বিদ্যালয়ে ওয়াশ রুমের দরজা খুলে না। তিনি আক্ষেপের সাথে বলেন, ঠিকাদার এবং ইঞ্জিনিয়ার যদি এক হয়ে যায় তাহলে কাজ বুঝে নেওয় মুশকিল হয়ে যায়। তবে, ব্যাপারটা নিয়ে আমি কথা বলবো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।