খুলনা জেলার ডুমুরিযা উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাময়িক বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিনকে স্থায়ীভাবে অপসারনের দাবিতে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে সরকারি একাধিক সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে।
এলাকাবাসীর আবেদন পত্র সূত্রে জানা যায়, শেখ তুহিনুল ইসলাম পিতাঃ মৃত মোস্তফা শেখ গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা ছিলেন। পরবর্তিতে জীবিকার তাগিদে তিনি খুলনা শহরের রায়েরমহল এলাকায় তার পিতা বসতি স্থাপন করেন। শেখ তুহিনুল ইসলাম পরে গুটুদিয়া এলাকায় ভোটার হন। ভোটার হওয়ার পর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাত ভাই দেশ ছেড়ে পলাতক শেখ হেলাল উদ্দীন ও শেখ সোহেলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। তাদের দাপটে হিন্দু অধ্যূষিত গুটুদিয়া ইউনিয়নের ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনে কারচুপি করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। সে বিভিন্ন সময়ে দাবি করে তার মা শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারের জমিদাতা। জমিদানের একটি দলিলও দেখাতেন বিভিন্ন জনকে।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর স্বৈরাচারী কায়দায় ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। তার কাছে জন্ম সনদ নাগরিক সনদ, ওয়ারেশ কায়েম সনদ নিতে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। এমনকি সে ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবা না দিয়ে তার মালিকানাধীন একটি মাছের আড়তে বিধিবর্হিভূতভাবে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় স্থাপন করেন।
২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধেও তার অবস্থান ছিল বিপরীত। তার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর আন্তজার্তিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ছাত্রদল কর্মী রকিবুল হাসান পিতাঃ রফিকুল ইসলাম হত্যার অভিযোগে মামলা হযেছে। ওই মামলার ১৫৬ নম্বর আসামী সে। এছাড়া ১১ ডিসেম্বর বিএনপি খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনার বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের মামলার ৪৬ নম্বর আসামী।
ওই মামলায় চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিন আদালতে জামিনের জন্য গত ১৭ এপ্রিল আদালতে হাজির হন। বিজ্ঞ আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এরপর গত ১৩ মে জেলা প্রশাসনের এক আদেশে ডুমুরিয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শেখ জাহিদুর রহমানকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। সম্প্রতি তুহিনুল ইসলাম তুহিন জামিন পেয়েছে। জামিন পাওযার পর জেলা প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসককে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। তাছাড়া ইউনিয়নের উন্নয়নে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের প্রকল্পে নিজেই তদারকি করছে। সে পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পূর্বে নেয়া অনেক প্রকল্প নিজস্ব লোককে পিআইসি করে সেসব কাজের টাকা নিজেই নেয়ার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হলেও চেয়ারম্যান তুহিন তার ফেসবুক আইডিতে শেখ হাসিনার পক্ষে বিভিন্ন ভিডিও, স্টাটাস শেয়ার করে যাচ্ছেন। এমনকি বর্তমান অর্ন্তবর্তিকালিন সরকারের সমালোচনার ভিডিও ও স্টাটাসও শেয়ার করছেন।
এ প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, গুটুদিযা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিনের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া, ছাত্রদল নেতা হত্যা ও বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনায় মামলা হয়। সে মামলায় জামিন নিতে গেলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। পরে নিয়ম অনুযায়ি ওই ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরপর সে জামিনে মুক্ত হয়। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগে জেলা প্রশাসক বারাবর এলাকাবাসী আবেদন করেছে। সে সব বিষযে তদন্ত চলছে। দ্রুততম সমযের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার।