খুলনা নগরীর বয়রা এলাকায় ‘হাতে তৈরি’ বিষাক্ত মদপানে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে বয়রা পুজাখোলা ইসলামিয়া কলেজ মোড় সংলগ্ন তোতা হোটেলে এই ঘটনা ঘটে। একই ঘটনায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরও একজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
নিহতরা হলেন—বয়রা সেরের বাজার মোড়ের আব্দুর রবের ছেলে বাবু (৫০), বয়রা মধ্যপাড়া এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে সাবু (৬০), বয়রা জংশন রোডের গৌতম কুমার বিশ্বাস (৪৭), রায়ের মহল এলাকার আজিবর (৫৯) এবং তোতা হোটেলের মালিক তোতা (৬০)।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অপারেশন অফিসার এসআই আবদুল হাই জানান, তারা সবাই শনিবার সকালে তোতা হোটেলে বসে ‘রেক্টিফায়েড স্পিরিট’ ধরনের মদপান করেন। স্থানীয়ভাবে তৈরি এই মদে মেশানো ছিল চুনের পানি ও ঘুমের ট্যাবলেট, যা শরীরে প্রবেশের পর তাদের একজনের পর একজন গুরুতর অসুস্থ করে তোলে। পরে তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে মারা যান পাঁচজন।
পুলিশ জানায়, মৃতদের পরিবারের সদস্যরা লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলেও সন্ধ্যার পর ঘটনা জানাজানি হয়। পরে খবরে সাড়া দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল তদন্ত শুরু করে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (দক্ষিণ) হুমায়ুন কবির বলেন, “এই মৃত্যুগুলো মদ্যপানজনিত, নাকি কোনো বিষক্রিয়াজনিত—তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে ময়নাতদন্তের পর। তবে প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে তারা সবাই একটি নির্দিষ্ট স্থানে একই ধরনের ‘হাতে বানানো’ মদ পান করেছিলেন।”
এদিকে, একই মদপানে আরও একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার পরিচয় সনু বলে জানা গেছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তিরা যে মদ পান করেছিলেন তা ছিল ‘এলকোলি’ নামে একটি নিষিদ্ধ মেডিসিন থেকে প্রস্তুত। ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা ওই মেডিসিনের সঙ্গে চুনের পানি ও ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে এই মদ প্রস্তুত করা হয়। ফলে তা সেবনে শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘তোতা হোটেল’-এর কার্যক্রম, মদ সরবরাহের উৎস এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত শুরু করেছে।