সরাসরি গুলির নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা: আলজাজিরার প্রতিবেদন

এফএনএস অনলাইন:
| আপডেট: ২৪ জুলাই, ২০২৫, ০৮:০০ পিএম | প্রকাশ: ২৪ জুলাই, ২০২৫, ০৭:৫৬ পিএম
সরাসরি গুলির নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা: আলজাজিরার প্রতিবেদন

শেখ হাসিনার গোপন ফোনকলের রেকর্ড পর্যালোচনা করে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় তার সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ‘প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার’ করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের ‘যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গুলি করার’ জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন।”

আলজাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিট (আই ইউনিট) শেখ হাসিনার কথপোকথনের অডিও রেকর্ডটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছে এবং সেটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করার জন্য ভয়েস ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে কথপোকথনের অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বরকে শনাক্ত করেছে।

বাংলাদেশের ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টারে (এনটিএমসি) ১৮ জুলাই ধারণ করা একটি কথপোকথনে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায় যে, তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

পরে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র এবং হাসিনার আত্মীয় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনালাপে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলেন। তাকে বলতে শোনা যায়, যেখানেই তারা কোনো সমাবেশ দেখতে পায়, তা উপর থেকে - এখন এটি উপর থেকে করা হচ্ছে - এটি এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় শুরু হয়েছে। এটি শুরু হয়েছে। কিছু (প্রতিবাদকারী) সরে গেছে।


সেই সময় বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর আকাশ থেকে গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করেছিল। কিন্তু ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুর্ঘটনা ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাবির শরীফ আল-জাজিরার আই-ইউনিটকে বলেন, আমাদের হাসপাতালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে একটি হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর শরীরে অস্বাভাবিক ধরনের গুলি বিদ্ধের চিহ্ন পাওয়া যায়।

হাসিনার নজরদারি নেটওয়ার্ক এনটিএমসি এই কথোপকথনগুলো রেকর্ড করেছে। এনটিএমসি'র বিরুদ্ধে পূর্বে কেবল বিরোধী দলের ব্যক্তিত্বদের ওপরই নয়, এমনকি হাসিনার রাজনৈতিক মিত্রদের ওপরও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে আল-জাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, হাসিনা কখনো ‘মারাত্মক অস্ত্র’ শব্দটি ব্যবহার করেননি এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে অনুমোদন দেননি। তিনি বলেন, এই (হাসিনার ফোনের) রেকর্ডিংটি কোনো নির্দিষ্ট অংশ বেছে নেওয়া, বিকৃত বা উভয়ই।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি চাকরিতে বিশেষ কোটার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুনে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। হাইকোর্ট পুরোনো কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সেই সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই কোটা ব্যবস্থা আওয়ামী লীগের সমর্থকদের প্রতি পক্ষপাতমূলক এবং যোগ্যতার চেয়ে পারিবারিক পরিচয়ই চাকরির ভিত্তি হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন।

গত বছরের ১৬ জুলাই দেশের উত্তরাঞ্চলীয় শহর রংপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। জুলাই অভ্যুত্থানে তার মৃত্যুই আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসটি) জানায়, শেখ হাসিনার সরকারের দমন-পীড়নে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত এবং ২০ হাজার আহত হয়েছেন।