পুষ্টিহীনতার বেড়াজালে বস্তিবাসী-সমাধান চাই সমন্বিত উদ্যোগে

এফএনএস | প্রকাশ: ২৬ জুলাই, ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম
পুষ্টিহীনতার বেড়াজালে বস্তিবাসী-সমাধান চাই সমন্বিত উদ্যোগে

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে দ্রুত নগরায়ণের ফলে গড়ে ওঠা অসংখ্য বস্তি যেন একটি ‘অদৃশ্য শহর’। এই শহরের বাসিন্দারা আমাদের নীতিনির্ধারণে অনেকাংশেই অদেখা-অশ্রুত। রাজধানীর বাউনিয়াবাদ বস্তিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য সেই বাস্তবতারই উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বস্তির অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ৮০ শতাংশ ক্যালসিয়াম ও ৫৮ শতাংশ আয়রনের ঘাটতিতে ভুগছেন। শিশুদের প্রায় অর্ধেক খর্বাকৃতির; ২৭ শতাংশের উচ্চতা এবং ২০ শতাংশের ওজন বয়স অনুযায়ী কম। ৫৯ শতাংশ শিশু রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত। এই পুষ্টিহীনতা কেবল স্বাস্থ্যগত দুর্দশা নয়, এটি জাতিগত ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলেই আশঙ্কা করা যায়। বস্তিতে বসবাসকারী ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে ৯১ শতাংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত এবং ৮০ শতাংশ পরিবার গাদাগাদি করে এক কক্ষে বাস করে। শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে মৌলিক স্বাস্থ্যবিধিও রক্ষা করা কঠিন। এই বাস্তবতায় পুষ্টির অভাব, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার বৃদ্ধি, কর্মক্ষমতা হ্রাস এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত একটি প্রজন্ম গড়ে উঠছে। আইসিডিডিআরবির ‘‘নিউট্রি-ক্যাপ’’ প্রকল্পের গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে-যথাযথ পুষ্টি, স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং সচেতনতাভিত্তিক সেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। গর্ভবতীদের ওজন বেড়েছে, হাসপাতালে প্রসবের হার বেড়েছে, গর্ভপাত ও নবজাতক মৃত্যুর হার কমেছে। কিশোরীদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়েছে, শিশুদের উচ্চতা ও ওজনেও উন্নতি এসেছে। অর্থাৎ, সঠিক পরিকল্পনায় স্বল্পসংখ্যক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব। তবে এই অগ্রগতি যাতে সাময়িক না থাকে, তার জন্য প্রয়োজন বৃহৎ পরিসরে সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ। স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দিকনির্দেশনার অপ্রতুলতা ও সমন্বয়ের অভাব দূর করতে হবে। বস্তিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি সহায়তা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত অধিকারকে একটি জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সরকারি বরাদ্দ, আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং নগর পরিকল্পনায় বস্তির জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি বাস্তবভিত্তিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যনীতির প্রণয়ন আজ সময়ের দাবি। একই সঙ্গে দরকার সচেতনতাভিত্তিক কর্মসূচি, যাতে জনগণ নিজেরাও স্বাস্থ্যবিধি ও পুষ্টি বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারেন। বস্তির শিশুরা, কিশোরী এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এক দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভিত্তি। তারা যেন অবহেলা ও দরিদ্রতার ফাঁদে বন্দি না থাকে-সেই লক্ষ্যেই এখন প্রয়োজন সময়োপযোগী ও টেকসই পদক্ষেপ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে