বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব অপরিসীম। রেমিট্যান্স-প্রবাহ সরাসরি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে গতিশীল করছে, পাশাপাশি জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে দেশের বিপুল বেকারত্ব লাঘব হচ্ছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদেশিক সম্পদ অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হল রেমিট্যান্স। আর রেমিট্যান্স হলো দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি এবং উন্নয়নের ভিত্তি, স্বপ্নের সোনালি সোপান ও অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে পাওয়া উন্নয়ন সহায়তার চেয়ে এর ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক বেশি এবং বেসরকারি ঋণ সংস্থা ও পোর্টফোলিও ইকুইটি প্রবাহের চেয়েও অনেক বেশি স্থিতিশীল। মূলত অভিবাসীদের মাধ্যমেই অর্জিত হয় রেমিট্যান্স। প্রবাসী এসব শ্রমিক যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে, তা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের অর্ধেক। প্রবাসীদের কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ একটি সম্মানজনক অবস্থানে দাঁড়িয়েছিল। নানা কারণে বিদেশে শ্রমবাজার দিনে দিনে সংকুচিত হচ্ছে, অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা দ্রুত কমে আসছে, অনেক দেশ দক্ষ কর্মী ছাড়া নিচ্ছে না। বিশ্বের শীর্ষ ১০ গন্তব্য দেশগুলোর ৭৫ শতাংশ উচ্চ দক্ষ অভিবাসী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে-সব পেশায় দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে; আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কম্পিউটার সিস্টেম অ্যানালিস্ট, রোবটিক্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বিগ ডাটা অ্যানালিস্ট, সিকিউরিটি এক্সপার্ট, কিউলিনারি সার্ভিস এবং নির্মাণশিল্প ইত্যাদি। তাছাড়া জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নার্সিং, বয়স্ক সেবা, ওয়েল্ডিং, কেয়ার গিভিং, পাইপ ফিটিং, প্লাম্বার, কৃষি, হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ইত্যাদি পেশার চাহিদা রয়েছে। দেশের রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি। আমরা একটু দৃষ্টি দিলেই দেখতে পাব যে ২০১৯ এবং ২০২২ সালের চেয়ে অনেক কমসংখ্যক কর্মী প্রেরণ করেও ২০২০ সালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল অনেক বেশি। আবার ২০২১ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে দ্বিগুণ কর্মী প্রেরণ করা হলেও সে বছর ২০২১ সালের চেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছিল। মূলত রেমিট্যান্স আসে প্রবাসে স্থায়ীভাবে বসবাসরত ও অস্থায়ীভাবে কর্মরত সব বাংলাদেশি থেকেই। তাই কোনো বছরের কমবেশি কর্মী প্রেরণ করার ওপর ওই বছরের রেমিট্যান্সের উঠানামা নির্ভর করে না। এ ক্ষেত্রে একটি বছর বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের মোট সংখ্যা এবং তাদের আয়ের ওপর রেমিট্যান্স প্রেরণের পরিমাণ নির্ভর করে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী প্রেরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ দক্ষ কর্মীর সংখ্যা যতই বেশি হবে পরিশেষে রেমিট্যান্স ততই বৃদ্ধি পাবে। আমাদের অবশ্যই বিদেশে কর্মী প্রেরণে সংখ্যাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে সে ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর প্রাধান্য থাকাটাই কাঙ্ক্ষিত। আর দক্ষ কর্মীদের উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র সন্ধানে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। তা ছাড়া দক্ষ কর্মীর চাহিদা থাকা শ্রমবাজার শনাক্ত করে সেসব দেশের সঙ্গে কার্যকর ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হলে নতুন সরকারকে অবশ্যই একটি সুপরিকল্পিত ‘স্মার্ট অভিবাসন’ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।