ঝালকাঠি আ’লীগ ঠিকাদারের বিলের তদ্বির করতে আসা

বরিশালের দুই সমন্বয়ক লিখিত মুসলেকায় ছাড়

এফএনএস (ঝালকাঠি) : | প্রকাশ: ১ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম
বরিশালের দুই সমন্বয়ক লিখিত মুসলেকায় ছাড়

ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগের ঠিকাদারের বিলের তদ্বির করতে এসে জনতার হাতে আটক বরিশালের দুই সমন্বয়ক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম (২৪) ও বরিশল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. মেহেদী(২৫) বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে সদর থানায় থেকে লিখিত অঙ্গিকার দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কোন লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় ওসির রুমে বসে বৈসম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝালকাঠি ও বরিশালের সমন্বয়ক, যুবদল, এনসিপি নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলীর প্রতিনিধি, স্থানীয় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল নেতাদের সাথে আপসনামায় স্বাক্ষর রেখে তাদের চলে যেতে বলা হয়।

ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর কম্পিউটার অপারেট শাওন খানের ৩ কোটির টাকার ব্রীজ ও সড়কে কাজের চুড়ান্ত বিল তুলতে গেলে ঝালকাঠি এলজিইডি সিনিয়র প্রকৌশলীর রুমে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হলে সেখানে থাকা বিএনপি পন্থি ঠিকাদারদের সাথে ছাত্র সমন্বয়কদের সাথে হট্টোগোল সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের সদর থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পরে সদর থানায় আসেন ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মুবিন, বশিাল জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, বরিশাল মহানগর কমিটির সংগঠক তুষার খান, ঝালকাঠির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। এরপরে তাদের এলজিইডিতে আসা ঠিক হয় বলে সকলের কাছে স্বীকার করেন তারা। ওসির রুমে সাদা কাগজে ‘তাদের মধ্যে ভুল বোজাবুজি হয়েছে’ মর্মে একটি লিখিত কাগজে এনসিপি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠক, বিএনপি, যুবদলের কয়েকজন সে কাগজে স্বাক্ষর করে। পরে থানার সামনে সাংবাদিকদের সামনে যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, তাদের সাথে ভুল বোঝাবুজি হয়েছিলো, যা সিনিয়ন নেতাদের সামনে সমাধান হয়েছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝালকাঠি এলজিইডিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর কম্পিউটার অপারেট শাওন খানের ৩ কোটির টাকার ব্রীজ ও সড়কে কাজের চুড়ান্ত বিল তুলতে গত দুই মাস যাবত বরিশালের দুই সমন্বয়ক নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলীকে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। এক পর্যায়ে তারা উপজেলা প্রকৌশলীকে বিল ছাড়ানোর জন্য ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন বলেও অভিযোগ করেন নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী। তিনি আরও বলেন, ঘুষ নিয়ে অন্যের ঠিকাদারী বিল না ছাড়ায় তার বিরুদ্ধে বিভন্ন জায়গায় দপ্তরে অনিয়মের অভিযোগ দেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় তারা ঝালকাঠি এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে বিল না দেয়ার কৌফয়ত চান। এসময় সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উপস্থিত বিএনপি পন্থি ঠিকাদাররা ২ সমন্বয়ককে আমির হোসেন আমুর ষ্টাফ শাওনের বিল ছাড়াতে আসার অপরাধে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা দুই সমন্বক সাংবাদিকদের জানান, নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবীরের ঘুষ ও দুর্ণিতির বিষয়ে আমরা নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এসময় উপস্থিত ঠিকাদাররা মব সৃষ্টি করে আমাদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়।

আটককৃতরা হলেন, সদ্য বিলুপ্ত হওয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব ও আইন বিভাগের তৃত্বীয় বর্ষের ছাত্র সিরাজুল ইসলাম (২৪) ও বরিশল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সেমিষ্টারের ছাত্র মো. মেহেদী(২৫)। সিরাজুল ইসলাম ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের দোগলচিড়া গ্রামের ফল ব্যবসায়ী নুরুল বাশারের পুত্র এবং মেহেদী বরিশল শহরের কাকলীর মোড়ের মুদি দোকানি মো. কালামের পুত্র।

ঝালকাঠি সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, এলজিইডিতে দুই বৈসম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে স্থানীয় ঠিকাদাররা আটক করেছেন এমন খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তাদেরকে দুজনকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসি। তখন এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলো এ সমন্বয়করা তাদের অনৈতিকভাবে হয়রানী করে আসছে। আজ একটি কাজের অসম্পুর্ন বিল তুলে নিতে নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসে গিয়েছিলো। তাদের বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ না থাকায় এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করেছেন।  

নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবীর জানান, বরিশালের দুই সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর ষ্টাফ শাওনের পক্ষে ৩কোটি টাকার একটি কাজের চুড়ান্ত বিল ছাড়িয়ে নিতে আসে। কাজ শেষ না হওয়ায় এবং যথাযথ প্রক্রিয়ান বিল না করায় প্রকৃত ঠিকদারকে নিয়ে আসতে বলি। প্রকৃত ঠিকাদারকে না নিয়ে তারা কিছু ছেলেপেলে নিয়ে এসে বারবার চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। উর্ধতন কর্মকর্তা, নলছিটি উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের, স্থানীয় ছাত্রদল ও ছাত্র সম্বয়কদের জানিয়েছি। ঠিকাদার ছাড়া বিল কিভাবে দিব? এক পর্যায়ে তারা এ বিল ছাড়ানোর জন্য ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি রাজী না হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে হয়রানী করে আসছে। উর্ধত্বন কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে