জনকণ্ঠ পত্রিকার ব্যানারে ‘লাল-কালো’ রঙ ব্যবহারকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ বিরোধ এক পর্যায়ে মামলায় গড়িয়েছে। পত্রিকার উপপ্রধান প্রতিবেদক ইস্রাফিল ফরাজির দায়ের করা মামলায় সম্পাদক শামীমা এ খানসহ ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন পত্রিকাটির মালিকপক্ষ, কয়েকজন সাংবাদিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, এমনকি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন কর্মীও।
মামলার মূল অভিযোগ—১ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে জনকণ্ঠের ফেসবুক পেইজে একটি নিউজ কার্ডে আওয়ামী লীগের শোক দিবসের কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পত্রিকার ব্যানারে লাল রঙের পরিবর্তে কালো রঙ ব্যবহৃত হয়। এই পরিবর্তন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী, পত্রিকার সম্পাদক শামীমা এ খান, তাঁর ছেলে ও গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের ভাইস চেয়ারম্যান জিসাল এ খান এবং নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন বিষয়টি জানার পরও কালো রঙ ব্যবহারের পক্ষে অবস্থান নেন।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাংবাদিক আজাদ সোলায়মান অফিসে এলে তাঁকে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ জানানো হয়। তখন তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যরা পত্রিকার প্ল্যানিং এডিটর জয়নাল আবেদীন শিশির, সাংবাদিক মীর জসীম, অনলাইন উপদেষ্টা সাবরিনা বিনতে আহমেদসহ কয়েকজনের ওপর হামলা ও হুমকি দেয়। মামলায় সাবরিনার প্রতি যৌন সহিংসতার অভিযোগও করা হয়েছে।
অন্যদিকে আন্দোলনকারী কর্মীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মালিকপক্ষ ‘ফ্যাসিবাদী দমননীতি’ অনুসরণ করছে এবং তাদের দাবি মানা না হলে পত্রিকার মুদ্রণ সংস্করণে কর্মবিরতি চলবে। শনিবার তাঁরা এক ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেন এবং রোববার (৩ আগস্ট) ঘোষণা আসে, সোমবারের (৪ আগস্ট) পত্রিকা প্রকাশিত হলেও মঙ্গলবার ও বুধবার (৫ ও ৬ আগস্ট) মুদ্রণ সংস্করণ বন্ধ থাকবে।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারে চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে যোগ দেন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা আফিজুর রহমান। এরপর তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে থাকেন, যাদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে বলে অভিযোগ মালিকপক্ষের।
তবে আফিজুর রহমান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার স্বার্থে যা প্রয়োজন, সেটিই তিনি করেছেন। তাঁর ভাষ্য, “হাউজ দখলের প্রশ্নই আসে না। আমি কোনো ষড়যন্ত্রে নেই।”
অন্যদিকে, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জনকণ্ঠের প্ল্যানিং এডভাইজার জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, “আমরা মালিকানা বা প্রকাশনায় নেই, শুধু সাংবাদিকদের স্বার্থে একটি বোর্ড গঠন করেছি।” তিনি মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করার অভিযোগও তোলেন।
জনকণ্ঠ পত্রিকাটি ১৯৯৩ সালে প্রয়াত আতিকউল্লাহ খান মাসুদের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে। এক সময় এটি মূলধারার প্রভাবশালী পত্রিকা হলেও পরবর্তীতে এটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হয়।
বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ, সম্পাদনা ও আদর্শিক অবস্থান নিয়ে যে দ্বন্দ্ব চলছে, তা কীভাবে সমাধান হবে বা আদৌ হবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।