আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে চতুর্থ সাক্ষী রিনার জবানবন্দি

“নিজ চোখে আবু সাঈদকে গুলি করতে দেখেছি”

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম | প্রকাশ: ৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম
“নিজ চোখে আবু সাঈদকে গুলি করতে দেখেছি”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী রিনা মুর্মূ। বুধবার (৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ তিনি চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন।

বিচারপতি মো. গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই জবানবন্দি গ্রহণ করে এবং পরে তাকে জেরা করা হয়। সাক্ষ্য প্রদানকালে রিনা মুর্মূ জানান, তিনি নিজ চোখে দেখেছেন কিভাবে দুই পুলিশ সদস্য—আমির হোসেন ও সুজন চন্দ্র—রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে থেকে তাঁদের সহযোদ্ধা আবু সাঈদকে গুলি করেন।

রিনা বলেন,
“আমি নিজ চোখে আবু সাঈদকে গুলি করতে দেখেছি। এ ঘটনায় শুধু ঐ দুই পুলিশ সদস্য নয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”

তিনি আরও জানান, সেদিনের সংঘর্ষে তিনিও আহত হয়েছিলেন। তার এই সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপনের পর তাকে জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন, যিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে, প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন মিজানুল ইসলাম ও গাজী এম এইচ তামিম।

এর আগে রোববার (৩ আগস্ট) এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ। তিনি ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশ ও সেনা সদস্যদের মোতায়েন এবং অস্ত্র ব্যবহারের কিছু তথ্য দেন।

গত ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একই আদেশে মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৩ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়। তখন থেকেই মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে বিচারকগণ জানান, অভিযোগে পর্যাপ্ত ভিত্তি রয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ গৃহীত হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এই মামলায় বিশেষ একটি মোড় আসে, যখন আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত তথ্যমূলক স্বীকারোক্তির বিনিময়ে পুলিশের তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন গ্রহণ করে। জানা গেছে, আদালতের শর্ত অনুযায়ী মামুন পুরো সত্য প্রকাশ করতে সম্মত হয়েছেন।

প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত সংঘর্ষ এবং দমন-পীড়নের প্রেক্ষিতে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময়কার সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে সাধারণ নাগরিক ও ছাত্রদের ওপর হত্যা, গুম, নির্যাতন চালিয়েছে—যা আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় পড়ে।

সেই সময়ের বিভিন্ন ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এই মামলার মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চারজন প্রত্যক্ষ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল।

এই মামলার রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে বলেই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট আইনজ্ঞরা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে