‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’কে কেন্দ্র করে ঘোষিত ‘জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র’ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই ঘোষণার প্রক্রিয়া, বক্তব্য এবং নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণায় ইসলামপন্থি দলগুলোর মতামত উপেক্ষিত হয়েছে, যা ইতিহাস, গণতন্ত্র এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি এক ধরনের ‘চরম অবহেলা’।
বুধবার (৬ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে মামুনুল হক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার পাঠ করা ঘোষণাপত্র এবং একটি নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ—সবকিছুই প্রমাণ করে, ইসলামপন্থিদের আত্মত্যাগ, সাংগঠনিক ভূমিকা এবং রাজনৈতিক অবস্থানকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। এই অবজ্ঞা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অপমান।”
তিনি বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছেন—আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাশিক্ষক-ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট—তাদের ভূমিকা ঘোষণাপত্রে উপেক্ষিত হয়েছে। এমনকি ১৯৪৭-এর আজাদী, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর গণহত্যা, পিলখানা ট্র্যাজেডির মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোরও কোনো উল্লেখ নেই। অথচ এগুলো বাংলাদেশে স্বৈরাচার পতনের ধারাবাহিকতায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়।”
বিবৃতিতে তিনি আরও অভিযোগ করেন, “গত ১৫ বছর ধরে যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন—তাদের কাউকেই ৫ আগস্টের বিজয় মঞ্চে স্থান দেওয়া হয়নি। বরং একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মতামতের ভিত্তিতেই সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে ‘যৌক্তিক হলেও গ্রহণযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, “এই ঘোষণা কোনো জাতীয় সংলাপ বা ঐকমত্যের ভিত্তিতে আসেনি। বরং এসেছে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের চাপের ফলাফল হিসেবে। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়টি উপেক্ষিত থাকায় আমরা শঙ্কিত।”
তিনি বলেন, “জুলাই চেতনার মূল শক্তি ছিল জাতীয় ঐক্য এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার। অথচ সেই চেতনার বাস্তবায়নকে ভবিষ্যৎ সংসদের হাতে ছেড়ে দিয়ে তামাশা করা হয়েছে। এটি জনগণের সঙ্গে নির্মম উপহাস।”
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে মামুনুল হক বলেন, “আমরা মনে করি— প্রকৃত সংস্কার, ফ্যাসিবাদের বিচার, জাতীয় ঐক্য এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া আর কোনো পথ নেই। ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো জাতীয় রূপরেখা হতে পারে না।”
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের পূর্বে সব দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অধ্যাদেশ জারি করে ‘জুলাই সনদ’কে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে তা সর্বজনগ্রাহ্য করতে হবে। অন্যথায় এই ঘোষণাপত্র ও অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।”