সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলা পাশেই বয়ে চলেছে শাকবাড়িয়, কপোতাক্ষ নদী। গ্রামের মেঠপথ হাঁটলেই শোনা যায় পাখির কিচির মিচির ডাক। সেখানকার নদী তীর ধরে দেখতে পাবেন সারি সারি কেওড়া গাছ। ঘন সবুজ কেওড়া গাছে চেয়ে আছে চার পাশ।বর্ষাকালে সুন্দরবনের এসব গাছে ধরে বুনো ফল কেওড়া। বনজীবীদের ভাষায় এটি বনের ফল হলেও বন্যপ্রাণীর কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। বিশেষ করে হরিণ, বানর, কিছু পাখি ও অন্যান্য প্রাণীরা এই ফল খেয়ে থাকে। সুন্দরবনের বিভিন্ন খালের ধারে ঝোপঝাড়ের মাঝে কেওড়া গাছের শাখায় শাখায় লটকে আছে ছোট-বড় অসংখ্য কেওড়া ফল। বর্ষা মৌসুমে এই ফল পাকতে শুরু করে এবং তখন প্রাণীদের আনাগোনা আরও বেড়ে যায়। কেওড়া ফল দেখতে অনেকটা ডুমুরের কিংবা লটকনের মতো। সবুজ রঙের ফলের ওপরের মাংসল অংশ টক স্বাদের। ভেতরে বেশ বড় বীজ। সাধারণত ফাল্গুনে কেওড়াগাছে ফুল ফোটে আর চৈত্র-বৈশাখে ফল ধরে। আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত কেওড়া ফল পাওয়া যায়। উপকূলীয় জেলা সমূহের লোকজন কেওড়া ফলের সঙ্গে ছোট চিংড়ি মাছ ও মসুরের ডাল রান্না করে খেয়ে থাকে। তাছাড়া, কেওড়া ফল হতে আচার ও চাটনি তৈরি করা হয়। এ ফল পেটের অসুখের চিকিৎসায় বিশেষত, বদহজমে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, সুন্দরবনে উৎপন্ন মধুর একটা বড় অংশ আসে কেওড়া ফুল থেকে। তাই এ গাছটি হয়ে উঠতে পারে লবণাক্ততায় আক্রান্ত কর্দমাক্ত জমির বিশেষ ফসল। কেওড়া গাছ ২৯ মিটারের বেশি লম্বা হয় এবং মাটি শক্ত করে, জলবায়ু সহিষ্ণু, আবার উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধেও সহায়তা করে। ফলে সুন্দরবন টিকিয়ে রাখতে কেওড়ার মতো গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এই কেওড়া ফল বনের খাদ্যচক্র ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সংরক্ষণে আমাদের সচেতনতা দরকার।