দেশজুড়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। সর্বশেষ সরকারি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) একদিনেই এই ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন। একই সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০৮ জন রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, একদিনে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুইজন পুরুষ এবং একজন নারী। আর নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৩১৪ জনই রাজধানী ঢাকার বাইরে বসবাস করেন।
বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন বরিশাল (৭৩ জন), চট্টগ্রাম (৫৮ জন), এবং ঢাকা বিভাগের (৫৯ জন) বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোতে। ঢাকার অভ্যন্তরে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যথাক্রমে ৩৭ ও ৫৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। অন্যান্য বিভাগগুলোর মধ্যে খুলনায় ৩৭, ময়মনসিংহে ২৫, রাজশাহীতে ৫২, রংপুরে ৪ এবং সিলেটে ৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরে ৭ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২২০ জনে। এদের মধ্যে ১৩ হাজার ৬৪৫ জন পুরুষ এবং ৯ হাজার ৫৭৫ জন নারী। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২১ হাজার ৭৯৯ জন। মৃত্যুর সংখ্যা এরইমধ্যে ৯৫-এ পৌঁছেছে, যেখানে ৫৫ জন পুরুষ ও ৪০ জন নারী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু আর শুধু মৌসুমি রোগ নয়; এটি সারাবছরই ছড়িয়ে পড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, “বৃষ্টি শুরু হলে ডেঙ্গু বাড়ে। এর প্রতিরোধে কেবল ওষুধ ছিটানো যথেষ্ট নয়, সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত প্রচারাভিযান চালাতে হবে। সেই সঙ্গে জনগণকেও সচেতন হতে হবে।”
কীটতত্ত্ববিদ ডা. মনজুর চৌধুরী বলেন, “মশা নিধনে কেবল জরিমানা ও জনসচেতনতায় কাজ হবে না। দক্ষ জনবল দিয়ে সঠিক জরিপ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ওই বছর আক্রান্ত হয়েছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন, আর মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের।
বর্তমান পরিস্থিতি বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যবিভাগ, স্থানীয় সরকার এবং সাধারণ জনগণকে সম্মিলিতভাবে কার্যকর উদ্যোগ নিতে না পারলে এ বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতিও হতে পারে ভয়াবহ।