জামিন পেলেন না সাবেক সিইসি নূরুল হুদা, কারাগারেই থাকছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫, ০৮:২১ পিএম
জামিন পেলেন না সাবেক সিইসি নূরুল হুদা, কারাগারেই থাকছেন

তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ‘ভোট ছাড়াই সংসদ গঠনের’ অভিযোগে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকার ১২তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এর আগে ২২ জুন রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টর থেকে তাকে জনতা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরা অবস্থায় সাবেক এ সিইসিকে বিক্ষুব্ধ জনতা জুতার মালা পরিয়ে অপমান করে। পরদিন ২৩ জুন রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও বেআইনিভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে করা মামলায় আদালত তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর ২৭ জুন দ্বিতীয় দফায় আরও চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় তাকে। রিমান্ড শেষে ১ জুলাই আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

নূরুল হুদার পক্ষে দায়রা আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজীব। এর আগে ২ জুলাই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছিল।

অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কার তিন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন ২২ জুন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনজন সাবেক সিইসি—কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তী সময়ে মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ যুক্ত করা হয়।

মামলায় বলা হয়েছে, উল্লিখিত তিনটি নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে ‘গায়েবি মামলা, অপহরণ, গুম, খুন ও ভয়ভীতি’ প্রদর্শন করে বিএনপি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে দূরে রেখেছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে সাংবিধানিক পদে থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা হয়েছে।

বিএনপির দাবি, ভোট ছাড়াই সংসদ গঠন এবং বিজয়ী ঘোষণা করা দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানুষের ভোটাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘনের শামিল। মামলায় উল্লেখ করা হয়, এসব ঘটনার সাক্ষী হাজার হাজার ভোটার, নির্বাচনি কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। ভোটারদের প্রকৃত ভোটাধিকার আদৌ প্রয়োগ হয়েছে কিনা—তা নির্ধারণে ব্যালট পেপার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।

উল্লেখ্য, কে এম নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ সিইসি হিসেবে শপথ নেন। তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হয়।

এ মামলায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদার তিন দিন পর গ্রেপ্তার করা হয় আরেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে। তাকেও রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে