নির্বাচনের আগে দেশে সহিংসতার আশঙ্কা: ‘গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্য দরকার’, বললেন মেজর হাফিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:৩৭ পিএম | প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:০৮ পিএম
নির্বাচনের আগে দেশে সহিংসতার আশঙ্কা: ‘গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্য দরকার’, বললেন মেজর হাফিজ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশে নতুন করে অস্থিরতা ও সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তাঁর দাবি, বিদেশে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে সহিংস ঘটনার জন্ম দিতে পারেন।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীতে ‘দ্রুত বিচার সম্পন্ন, মৌলিক সংস্কার ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে দেশে কিন্তু অনেক গন্ডগোল হবে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে মাফিয়া নেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে লণ্ডভণ্ড করার জন্য, নির্বাচন বানচালের জন্য নানা ধরনের সহিংসতার অবতারণা করবেন। আমরা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে এই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করবো— এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”

আয়োজক সংগঠন অগ্নিসেনা সোশ্যাল ফাউন্ডেশন ও আমাদের নতুন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় মেজর হাফিজ বলেন, দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরেই ‘প্রহসনমূলক নির্বাচন’ হয়ে আসছে। গত ১৫ বছরে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন জনগণের সঙ্গে প্রতারণার নজির ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করেন, “শেখ হাসিনা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন। কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে— বিরোধী দলকে দমন করতে গিয়ে দেশে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। আওয়ামী লীগের একজন প্রতিমন্ত্রীর শুধু লন্ডনেই ৩৬০টি বাড়ি রয়েছে; রয়েছে দুবাই ও আমেরিকাতেও বিপুল সম্পদ। এই সরকার লুটপাটে বিশ্ব রেকর্ড করেছে।”

গণতন্ত্র রক্ষায় নতুন প্রজন্মের ভূমিকার প্রশংসা করে মেজর হাফিজ বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই এক দফার আন্দোলনের সূচনা হয়। এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এতে সংহতি জানায়। জাতি তখনই গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায়। তরুণ প্রজন্ম সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছে।”

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, একজন জ্ঞানী ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানুষ হিসেবে তিনি জাতিকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেবেন। তিনি আন্তরিকভাবেই চেষ্টা করেছেন, তবে উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্য ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। কেউ পাঁচ বছর, কেউ আরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন, যা হতাশাজনক।”

মেজর হাফিজ আরও বলেন, “নির্বাচন এমন পদ্ধতিতে হওয়া উচিত, যা সহজ ও সাধারণ মানুষের বোধগম্য। জনগণ বিপদে-আপদে যাকে আশ্রয় মনে করবে, তাকেই ভোট দেবে।” তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বিএনপি প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সংস্কারের বেশিরভাগ অংশের সঙ্গে একমত থাকলেও কিছু বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন এই নেতা। তাঁর ভাষায়, “একটি রাজনৈতিক দল, যারা আমাদের দীর্ঘদিনের মিত্র ছিল, তারাও এখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পেছনে ঠেলে দিতে চাইছে। অথচ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল গোটা জাতির সংগ্রাম, কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নয়।”

বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে মেজর হাফিজ বলেন, “আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেনি। তারা গণতন্ত্রকে ছুড়ে ফেলে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কথা দিনরাত বললেও শেষ হবে না।”

পুলিশ প্রশাসনে সংস্কারের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “নির্বাচনে এই বাহিনী নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে,” বলেন মেজর হাফিজ।

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখন জাতি নতুন আশায় বুক বেঁধেছে। আমরা গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ দেখতে চাই। জনগণ কখনো ভুল করে না— এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা স্বৈরশাসনকে চিরতরে বিদায় জানাতে চাই।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে