বাগেরহাট আইনজীবী সমিতির আওয়ামী প্যানেলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পলাতক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের অন্যতম দোসর এ্যাডভোকেট সৈয়দ জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত একটি অসহায় পরিবারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে খুলনা সিটি ল কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দ আকিব মুনসুর অভিযোগ করেন, বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিবাদ শাসন আমলে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম করেছি। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতন ঘটলেও তাদের সহযোগীরা এখনও রয়েছে বহাল তবিয়তে। বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনও তাদের দাপটে সাধারণ মানুষ আতংকগ্রস্থ। কেসিসির পলাতক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের অন্যতম দোসর এ্যাডভোকেট সৈয়দ জাহিদ হোসেন ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ আমলে বাগেরহাট বারের সাধারণ সম্পাদক ও এপিপি ছিলেন। সে সময় ক্ষমতার দাপটে ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতেন না। ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে গেলেও এই জাহিদ হোসেন এখনও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তিনি আমার ও আমার চাচাদের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ও নিজস্ব ক্রয়কৃত সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে ভোগ করছেন। আমরা ওই সম্পত্তি দখলমুক্ত করার জন্য আজ দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু তার অবৈধ অর্থ ও ক্ষমতার নিকট অসহায় হয়ে আজ আপনাদের নিকট হাজির হয়েছি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমার দাদা সৈয়দ মুনসুর আলী ১৯৮৭ সালের ১৫ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী,৪ পুত্র ও ১ কন্যাকে রেখে যান। আমার দাদার ২য় পুত্র সৈয়দ জাহিদ হোসেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে জাহিদ হোসেন প্রভাব খাটিয়ে দাদার সকল জমি জমা নিজ দখলে নেন। রামপাল উপজেলার সরাপপুর মৌজার এসব জমির হারি (লীজ) বাবদ প্রাপ্ত অর্থ এবং ফসলাদী সব কিছুই তিনি নিজে আত্মসাত করেন। শরিকদের কাউকেই তিনি তাদের প্রাপ্য অংশের কানা কড়িও দেননি। এর প্রতিবাদ করলে পৈত্রিক অংশের সঙ্গে শরিকদের ক্রয়কৃত সম্পত্তিও তিনি দখল করে নেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। দলের মনোনয়নে তিনি আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হন। সে সময় তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ওয়ারিশন ও নিজস্ব সম্পত্তির মোট ৩০ বিঘা সম্পত্তি মাছের ঘের, মাছের খামার, মুরগীর খামার ও গরুর ফার্ম প্রজেক্ট দেখিয়ে ২ কোটি টাকার উর্দ্ধে ঋণ গ্রহণ করেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি আমার দাদার বেশ কিছু সম্পত্তি নিজ নামে রেকর্ড করিয়ে নেন। তিনি সম্পূর্ণ গায়ের জোরে এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমাদের বসতবাড়ি, পুকুর, বাগান, ভিটা সংলগ্ন চাষাবাদের জমিসহ সমুদয় সম্পত্তি দখল করে নিজস্ব মাছের ঘের, মাছের খামার, মুরগীর খামার ও গরুর খামার তৈরি করেছেন। এ সম্পত্তির সকল আয় ও ফসলাদী তিনি নিজে ভোগ করেন। এমনকি বসতবাড়ি সংলগ্ন সর্ব সাধারণের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এবং পানি সরবরাহের খালও তিনি অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন। ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর আমার দাদী সুলতানা বেগমের মৃত্যুর পর দাদীর নিজস্ব ১৫ বিঘা সম্পত্তিও তিনি জোর পূর্বক দখল করে নেন। এছাড়া সুলতানা বেগম ও খালা হাসিনা খন্দকারের ১৯ বিঘা সম্পত্তি বিক্রি করে ৩৮ লাখ টাকা তিনি আত্মসাত করেন। আমরা ওয়ারেশগণ আমাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানালে তিনি আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ব্যাপারে আমরা বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমার চাচা প্রফেসর ডঃ সৈয়দ জাবিদ হোসাইন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ছিলেন। আমার ফুফু সৈয়দা জেবুননিছা সুলতানা অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব। অপর চাচা সৈয়দ জাকির হোসেন আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। তারা সকলেই এই ফ্যাসীবাদের দোসর জাহিদ হোসেনের নিকট আজ অসহায় হয়ে পড়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের ও প্রশাসনের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ সম্পত্তি ভোগ দখল করতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করা হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাডভোকেট সৈয়দ জাহিদ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, সকল সম্পত্তি নিয়ম অনুযায়ী ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে, সবাই নিজ নিজ সম্পত্তি ভোগ দখল করছে। তিনি অন্যায় ভাবে বা জোরপূর্বক কারো সম্পত্তি দখল করেননি বলে দাবি করেন।