দেশের গণহত্যা দমন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যারা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যায় জড়িত ছিলেন, তারা কেউই বিচার থেকে রেহাই পাবে না। সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, যারা ভেবেছিলেন যে বাংলাদেশের মাটিতে গণহত্যা চালিয়ে পার পাওয়া সম্ভব হবে বা প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা যাবে, তাদের জন্য পরিষ্কার বার্তা হলো—অপরাধীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবেন না। দেশের বিচারব্যবস্থা এই প্রক্রিয়াকে কোনওভাবেই বন্ধ হতে দেবে না।
সেই সঙ্গে তিনি জানান, যারা নিজের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার মুক্ত করেছেন, তাদের স্বজন ও পরিবার আজও জীবিত আছেন। তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অব্যাহত থাকবে।
একই দিনে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় রাজধানীর চানখারপুলে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান আনাসসহ ছয়জনের হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর। এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে শহীদ আনাসের বাবা শাহরিয়ার খান পলাশ এবং তার মা আদালতে উপস্থিত থেকে সাক্ষ্য দেন।
এর আগে, ১৪ জুলাই এই মামলায় পলাতক চার আসামিসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার চারজন আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন এবং মো. নাসিরুল ইসলাম। তবে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া সত্ত্বেও আদালতে হাজির হননি।
মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি ২০২৪ সালের ৩ জুলাই শুরু হয় এবং ২৯ জুন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে অভিযোগ গঠনের অনুরোধ করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করতে শুনানি সময় চেয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া কোনোভাবেই থেমে থাকবে না বলে দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর।