জেনেভা ক্যাম্পে পাঁচ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত: নিহত ১, গ্রেপ্তার ২, আতঙ্কে বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১১ আগস্ট, ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম
জেনেভা ক্যাম্পে পাঁচ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত: নিহত ১, গ্রেপ্তার ২, আতঙ্কে বাসিন্দারা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার দখলদারিত্বকে ঘিরে টানা পাঁচ দিন ধরে চলা সংঘর্ষ সোমবার (১১ আগস্ট) আরও রক্তাক্ত রূপ নেয়। ৭ নম্বর সেক্টরে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই গ্রুপের মধ্যে লাঠি, রড ও ধারালো অস্ত্রের হামলায় নিহত হয় ২০ বছরের তরুণ শাহ আলম। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চাপাতিসহ ফয়সাল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে, পরে সেলিম নামের আরেকজনকেও আটক করে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, সংঘাত শুরু হয় বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে পাক্কা ক্যাম্প এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে। বুনিয়া সোহেলের নেতৃত্বে কয়েকজন মাদক কারবারি সেখানে হামলা চালায়, এতে কয়েকজন আহত হয়। এর পর থেকে রোববার পর্যন্ত অন্তত আটবার ককটেল বিস্ফোরণ ও দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। আহতদের মধ্যে আছেন বশির বাবুর্চি (৪০), মদিনা (২০) ও ফায়জান (২৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই সহিংসতার মূল পটভূমি দীর্ঘদিনের মাদক ব্যবসার আধিপত্যের লড়াই। ২০১৮ সালে র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত পাঁচ্চিশ ও পরবর্তীতে ভারতে পালিয়ে মারা যাওয়া ইশতিয়াকের মৃত্যুর পর ক্যাম্পের মাদক সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় কয়েকটি গ্রুপের হাতে। বর্তমানে তিনটি বড় গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ তীব্র:

বুনিয়া সোহেল গ্রুপ — ৭ নম্বর সেক্টর

সৈয়দপুইরা বাবু গ্রুপ — এনএলজে স্কুল রোড এলাকা

চুয়া সেলিম গ্রুপ — এবি ব্লক পাক্কা ক্যাম্প

সাম্প্রতিক সহিংসতায় জড়িতদের মধ্যে আছেন বুনিয়া সোহেল, পিচ্চি রাজা, মনু, বেজি নাদিম, চুয়া সেলিম ও তাদের সহযোগীরা। অভিযোগ রয়েছে, তারা শান্তি বাহিনী নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ভাড়া করে হামলা চালায়। শান্তি বাহিনীর প্রধান শাহনেওয়াজ সান্নুর নেতৃত্বে এই গোষ্ঠী পিচ্চি রাজার মাদকের স্পট দখল নিতে প্রথমে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়, পরে গুলি চালায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও সংঘর্ষ সাময়িকভাবে থেমে আবারও শুরু হয়। ক্যাম্পবাসীরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ ঢোকার আগে থেকেই কারবারিরা খবর পেয়ে যায়, কারণ তাদের বিভিন্ন জায়গায় সোর্স রয়েছে। থানাপুলিশ সূত্র জানায়, শুধু বুনিয়া সোহেলের বিরুদ্ধেই অন্তত ৩০টি মামলা রয়েছে, এছাড়া পোপলা মুন্না, খুল্লা সাহিদ, দোগলা আজম, চুয়া সেলিম ও পিচ্চি রাজার বিরুদ্ধেও একাধিক মাদক ও হত্যা মামলা চলছে।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, “জামিনে বের হওয়া কারবারিরা ব্যবসার দখল নিতে ফের সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এখন পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।” এদিকে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা জানান, নিহত শাহ আলমের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রাখা হয়েছে এবং শিগগিরই সংঘাতে জড়িতদের আবারও গ্রেপ্তার করা হবে।

দীর্ঘদিনের মাদক কারবারের দখলদারিত্বের দ্বন্দ্বে রক্তপাত ও বিস্ফোরণের এই ধারাবাহিক ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে জেনেভা ক্যাম্পের সাধারণ বাসিন্দারা, যারা প্রতিদিন মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে