খুলনার পাইকগাছায় মৃতপ্রায় শিবসা নদী খনন দু’যুগ অধিক সময় আশ্বাসে ঘুরপাক খাচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে না কোনো কার্যকরী উদ্যোগ। অতচ খননের দাবীতে ভুক্তভোগী এলাকার মানুষ বার বার আন্দোলন=সংগ্রাম করে যাচ্ছে। নদী খনন অন্দোলন-সংগ্রম নিষ্ফল ক্রন্দন হয়েছে। খননের দাবীতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অসংখ্য বার লিখিত আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু শুধু আশ্বাস মিলেছে, প্রায় আড়াই যুগেও বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখেনি। বরং কয়েক বছরের মধ্যে নদীর বিশাল অংশ ভরাট হয়ে গোচারণ ভূমিতে যাওয়ায় পরিনত হয়েছে। বে-দখল হয়েছে শত শত বিঘা নদী ভরাটী জায়গা। উপজেলা সদরের শিববাটী ব্রিজ হতে হাড়িয়া পর্যন্ত নদীর প্রায় ১৫ কিলোমিটার ভরাট হয়ে গেছে। যা ভূমি থেকে অনেক উঁচু হয়ে গেছে। নদীটি খননের জন্য বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সভা সমাবেশ ও মানববন্ধন করে আসছে। ১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে শিবসা নদী মৃত্যুর মুখে ধাবিত হয়। স্মারকলিপি ও আবেদন দেওয়া হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সহ বিভিন্ন দপ্তরে। দ্রুত খনন করা হবে এমন আশ্বাস কর্তৃপক্ষ দিয়েছিলেন। কিন্তু আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। হয়নি কোনো অগ্রগতি। উল্টো নদী ভরাটী জায়গা ভূমি দস্যুরা গিলছে। খরস্রোতা শিবসা নদী এখন শুধুই স্মৃতি। জানা যায়, শিবসা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৮৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫১০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা কর্তৃক শিবসা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৮৮। নদীটি উপজেলার লস্কর ইউনিয়ন এলাকায় প্রবহমান কপোতাক্ষ নদ হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা একই জেলার দাকোপ উপজেলার খুলনা রেঞ্জ ইউনিয়ন এলাকায় প্রবহমান পশুর নদীতে নিপতিত হয়েছে। গত এক দশক আগেও নদীতে সারাবছর পানি প্রবাহ পরিদৃষ্ট হয় এবং ছোটবড় নৌযান চলাচল করতো। জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত হতো। এই নদীর অধিকাংশ অংশ উপকূলীয় বনভূমি সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এ নদীর কিছু অংশ বাংলাদেশ-ভারত প্রটোকল রুটের অন্তর্গত। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দ্বিতীয় শ্রেণির নৌপথ হিসেবে স্বীকৃত। সুন্দরবন উপকূলীয় শিবসা নদীর মৃত্যু হলে কপোতাক্ষ নদসহ সংযুক্ত কয়েকটি নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে আটকে উপকূলীয় যশোর, সাতক্ষীর ও খুলনা জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ কৃত্রিম বন্যায় প্লাবিত হতে পারে। স্থানীয়দের অভিমত, আগামীতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে পানিবন্দী হতে পারেন তারা। এক সময় এ নদীতে চলতো লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা ও স্পীড বোর্ড। ছিল খেয়া। নদী ভরাট হয়ে গোচারন ভূমিতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে দখলবাজরা একাধিক বাঁধ দিয়ে করছে মাছের ঘের। গড়ে তুলেছে অবৈধ স্থাপনা। প্রশাসনের নিরাবতার কারণে দখলের প্রবতা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীন (সাবেক) বলেন, আমি পাইকগাছায় থাকালীন সময়ে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে বার বার লিখেছি। বর্তমান কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন বলেন, পাইকগাছাবাসীর জন্য শিবসা নদী খনন খুবই জরুরী। এটা না হলে পাইকাগাছা বার বার জলবদ্ধতার শিকার হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহের নাজনীন বলেন, শিবসা খননটা হলে জলবদ্ধতার হাত থেকে পাইকগাছাবাসী রক্ষা পাবে। দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হবে।