একটি উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আর সেটি নিশ্চিত করতে হলে মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি দেশের জনশক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, বেকারত্ব হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উৎপাদন ও রপ্তানিতে অগ্রগতি এবং দেশের সার্বিক উন্নতি সাধন হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও এই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত কতটুকু হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। যদি যথাযথভাবে মানসম্মত শিক্ষা সবার জন্য নিশ্চিত করা যায়, তাহলে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রাপ্তি সময়ের দাবি মাত্র। বর্তমানে দেশে ২০ হাজারের অধিক উচ্চ মাধ্যমিক ও তার নিচের পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আবার দেশে সরকারি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫০ এর অধিক। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার মতো পাঠ্যক্রম ও শিক্ষা পদ্ধতির ঘাটতি রয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে কিছু সুদূরপ্রসারী ভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। মানসম্মত পাঠ্যক্রম, শিক্ষক, মনিটরিং সেল গঠন, কারিগরি শিক্ষার সমন্বয়, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের দেশে পড়াশোনা করার পরেও বেকার থাকতে হয়। কারণ, কারিকুলামে রয়েছে সমস্যা। আমাদের এই কারিকুলাম বাতিল করে এমন এক কারিকুলাম তৈরি করতে হবে, যা হবে কারিগরি শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে। বারবার কারিকুলাম বদলানো যাবে না; বরং ভবিষ্যতের প্রগতিশীল বিশ্বে টিকে থাকার মতো সুদূরপ্রসারী কারিকুলাম বানানোর পরিকল্পনা করতে হবে। কারিকুলাম তৈরিতে অন্য দেশকে অনুকরণ বা অনুসরণ না করে ভৌগোলিক অবস্থান ও দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং দেশের বিভিন্ন অংশের ভূ-প্রকৃতি এক নয়। সেগুলো বিবেচনায় রেখে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর নতুন করে সাজাতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। যাতে একজন শিক্ষার্থীকে নিজে চাকরি করতে হবে বা চাকরি পাবে কিনা এমন চিন্তাভাবনায় ডুবে থাকতে না হয়। এই সমস্যা দূর করতে হলে প্রয়োজন মেধাবীদের শিক্ষকতার পেশায় নিয়ে আসা। কিন্তু অন্যান্য পেশার চেয়ে শিক্ষকতা পেশায় যদি সুযোগ সুবিধা কম থাকে তাহলে মেধাবীরা কেন এই পেশায় আসবেন? শিক্ষকতা মহান পেশা-এই ধরনের নীতিকথায় তো আর পেট চলে না। শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়াতে হবে। প্রযুক্তিগত শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।