দেখার যেন কেউ নেই

তানোর পৌরসভায় টোল আদায়ের নামে ইজারাদারের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

মো: ইমরান হোসাইন; তানোর, রাজশাহী | প্রকাশ: ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:৪৩ পিএম
তানোর পৌরসভায় টোল আদায়ের নামে ইজারাদারের বেপরোয়া চাঁদাবাজি
রাজশাহীর তানোর পৌরসভার হাট-বাজারে টোল আদায়ের নামে ইজারাদারের নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজি যেন স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে সরকার নির্ধারিত টোল আদায়ের ধার ধারে না ইজারাদার। স্বনির্ধারিত মূল্যে ইজারাদার লোক মাধ্যমে হাট বাজারে টোল আদায়ের নামে নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজি করছেন। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ রয়েছে নীরব। এতে বিপুল পরিমান ক্রেতা-বিক্রেতারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন প্রশাসনের নজরদারি ও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোর পৌর এলাকায় মোট তিনটি হাট-বাজার রয়েছে। এরমধ্যে দক্ষিণে কালিগঞ্জহাট হাট-বাজার। এটি ৫৯ লক্ষ টাকায় ইজারা নিয়েছেন মহিদুল ইসলাম ও তার লোকজন। আর তানোর সদরে গোল্লাপাড়া হাট-বাজার অবস্থিত। এটি ২৪ লক্ষ টাকায় ইজারা নিয়েছেন চাপড়া গ্রামের বাসিন্দা আয়েনের ভাই উজ্জল। এছাড়াও উত্তরে রয়েছে তালন্দ হাট-বাজার। এই হাটটি ২৬ লক্ষ টাকায় ইজারা নিয়েছেন চাপড়া গ্রামের সেকেন্দার আলী। এবারে এই তিনটি হাট সর্বমোট ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে। তবে, প্রত্যেক ইজারাদারকে শতকরা ২৫ পারসেন্ট ট্যাঙ্-ভ্যাট সঙ্গে জমা দিতে হবে। স্থানীয় সূত্রমতে, এসব হাট প্রতি সপ্তায় দুইদিন বসে। শুক্রবার আর মঙ্গলবার বসে গোল্লাপাড়া ও কালিগঞ্জহাট। আর রোববার ও বুধবারে বসে তালন্দ হাট। এসব হাট-বাজার চলতি অর্থবছরে ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ফলে টোল আদায়ে নতুন করে নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিপুল সংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতারা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, প্রান্তিক কৃষক ও সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, ইজারাদারের লোকজন রশিদের মাধ্যমে টোল আদায়ের কথা থাকলেও ইজারাদারের চেলা-চামচারা রশিদ ছাড়াই প্রতিবছর সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা টোল আদায় করছেন। এ বিষয়ে মুখ খুললেই শারীরিক মানসিক হেনস্থার শিকার হওয়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। তারা আরও বলেন, ইজারাদারের টোল আদায়কারীদের সাফ জবাব, ‘না পোষালে বাজারে আসবেন না’। অতিরিক্ত টোল এবং হেনস্থার ভয়ে অনেক গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পণ্য নিয়ে হাট বাজারে এসে পণ্য বিক্রয় করে বাধ্য হয়ে চাহিদা মতো খাজনা দেন। তারা এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারি প্রশাসনের নজরদারি ও হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা কামনা করেন। এবিষয়ে কালিগঞ্জহাট মাছ বাজারের টোল আদায়কারী ও ইজারা সিন্ডিকেটের সদস্য মো. সফিক নিজেই দম্ভ করে বলেছেন, দোকান প্রতি খাজনা আদায়ের নিয়ম রয়েছে ২০ টাকা। কিন্তু আমি মাছের দোকান প্রতি ৬০ টাকা খাজনা আদায় করি। নিয়ম মতে খাজনার টাকা আদায় করা হলে লোকসান হবে। তবে, আমরা সব খাত ম্যানেজ করেই বাজার ইজারা নেই। প্রতি বাজারে টোল চার্ট প্রদর্শন করার কথা থাকলেও তানোর পৌরসভার কোনো হাট বাজারে টোল চার্ট দেখা যায়নি। ডাব বিক্রেতা মাইনুল হক বলেন, প্রতি হাটে ডাব বিক্রির আগেই টোল দিতে হয় ৬০ টাকা। বাস্তবে তাকে টোল দিতে হবে ১০ টাকা। কিন্তু বেকায়দায় পড়ে ৫০ টাকা খাজনা বেশি দিতে হয় তাকে। জানা যায়, পণ্য লোড আনলোডের ট্রাক পিকাপভ্যানের টোল ২০ থেকে ৫০ টাকা হলেও বাস্তবে আদায় করা হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। এভাবে প্রত্যেক পণ্যে কয়েক গুণ বেশি টাকা টোল আদায় করছেন ইজারাদার ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। এনিয়ে কথা হয় কালিগঞ্জ হাট-বাজারের ইজারাদার মহিদুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, এবারে ৫৯ লক্ষ টাকায় হাট ইজারা নিয়েছেন তিনি। এরসঙ্গে ২৫ পারসেন্ট ট্যাঙ্-ভ্যাট দিতে হয়েছে। তবে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে টোল আদায় করা হলে বছরে ২০ লাখ টাকাও উত্তোলন হবে কিনা সন্দেহ আছে। এজন্য সরকারি তালিকা মেনে খাজনা আদায় সম্ভব নয় বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি। একই ধরণের মন্তব্য করেন গোল্লাপাড়া হাটের ইজারাদার উজ্জল ও তালন্দ হাটের ইজারাদার সেকেন্দার আলী। এব্যাপারে তানোর পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সানমান বলেন, প্রত্যেক হাটে ১৪৩২ সালের সরকারি মূল্য তালিকা সাইবোর্ড রয়েছে কিনা জানা নেই। তবে, সরকারি চার্ট অমান্য করে অতিরিক্ত টোল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও সব ইজারাদারকে ব্যাপারটি নিয়ে সতর্ক করা হবে। তালিকা না মানলে ইজারা বাতিলেরও সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন তিনি। ই/তা
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে