শ্রীমঙ্গলে বিরল নাগলিঙ্গম গাছ: ঔষধি গুনের এ গাছ এখন ফলে ভরপুর

এফএনএস (আতাউর রহমান কাজল; শ্রীমঙ্গল, মৌলভী বাজার) : | প্রকাশ: ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম
শ্রীমঙ্গলে বিরল নাগলিঙ্গম গাছ: ঔষধি গুনের এ গাছ এখন ফলে ভরপুর

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে রয়েছে এক বিরল ও ব্যতিক্রমী গাছ নাগলিঙ্গম। এই গাছ বর্তমানে বড় আকারের গোল ফলের ভারে নত হয়ে আছে। দেখতে অনেকটা কামানের গোলার মতো হওয়ায় এর ইংরেজি নাম ঈধহহড়হনধষষ ঞৎবব।

গাছটির আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার গায়ানা, ব্রাজিল ও ভেনেজুয়েলা অঞ্চল। ঔপনিবেশিক যুগে এটি এশিয়ায় আনা হয়। প্রথমে শ্রীলঙ্কা, পরে ভারত ও অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে খুব কম সংখ্যক নাগলিঙ্গম গাছ রয়েছে, যার মধ্যে শ্রীমঙ্গলের এই গাছ অন্যতম। চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে এটি শোভামূলক ও গবেষণামূলক কারণে রোপণ করা হয়েছিল।

এর উচ্চতা প্রায় ২০-২৫ মিটার। ফুল কমলা-লাল মিশ্রিত মাঝখানে হলুদাভ গঠন। ফল গোলাকার, ব্যাস ১৫-২৫ সেন্টিমিটার, ওজন ২-৩ কেজি পর্যন্ত। ভেতরের শক্ত খোসার ভেতরে আঁশযুক্ত নরম মজ্জা ও ২০০-৩০০ শক্ত বীজ থাকে। এটি ওষুধে ব্যবহৃত হয়। ফ্রান্সের একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জে. এফ. আবলেট ১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দে এর নামকরন করেন।

গাছের বিভিন্ন অংশে রয়েছে জীবাণুনাশক ও প্রদাহনাশক উপাদান যেমন এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান রয়েছে। ফলের মজ্জা ও ছালে থাকা যৌগ ক্ষতস্থানের জীবাণু ধ্বংসে সাহায্য করে। দাঁতের ব্যথা, মাড়ির সংক্রমণে সিদ্ধ জল দিয়ে কুলি করা হয়। পাতা ও ফলের নির্যাস ত্বকের ফাঙ্গাস সংক্রমণ, দাদ ও রিংওয়ার্ম নিরাময়ে কার্যকর। ফুলের নির্যাস সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস ও বীজের তেল ফোলা ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এন্টিসেপ্টিক ঔষধি গুনও রয়েছে এতে।

জানা যায়, দক্ষিন আমেরিকাতে এ গাছের পাতা ও ছালের নির্যাস চর্মরোগ ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। এ ফলের নির্যাস শরিরে ব্যবহার করলে পোকামাকড় ও মশার আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট সুত্র জানায়, ১৯৯৩ সালের ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ আল হেলাল চা গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে এ নাগলিঙ্গম গাছের চারাটি রোপন করেছিলেন।

শ্রীমঙ্গলের নাগলিঙ্গম গাছ শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক ঔষধি ভান্ডার। সঠিক গবেষণা ও সংরক্ষণ হলে এটি চিকিৎসা ও ভেষজ শিল্পে বড় সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে