ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যর মধ্য দিয়ে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় মনসা মঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কবি বিজয় গুপ্ত’র প্রতিষ্ঠিত ৫শ ৩১ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গৈলা মনসা দেবীর মন্দিরে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভক্তর উপস্থিতিতে কঠোননিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে বার্ষিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার সকাল ৮টা থেকে পুজার্চণা শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। হাজার হাজার শিশু-নারী-পুরুষ ভক্তরা তাদের মনস্কামনা পুরণ ও পুণ্য লাভের আশায় মানত পূজা দিতে দুধ, কলা, ফল, মিষ্টি, ধুপ, ধুনো, পশু বলিদান, যাগযজ্ঞ সম্পন্ন করেন। এ সময় আগত ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ।
জগদ্ববিখ্যাত কবি বিজয় গুপ্ত’র স্মৃতি রক্ষা মনসা মন্দির সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ড. বিনয় ভূষন রায় জানান, দেবী মনসা পূজা উপলক্ষে পূজার আগের দিন থেকেই দেশী-বিদেশী ভক্তরা সমবেত হতে শুরু করেন মন্দির আঙ্গিনায়। পূজার আগে মন্দির আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনের রয়ানী গান। রয়ানী গান হলো ছন্দ আর সুরের মুর্চ্ছনায় দেবী মনসার পৃথিবীতে চাঁদ সওদাগরের হাতে পূজা পাবার কাহিনী বর্ণনা।সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্ন করতে মন্দির কমিটি ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শত-শত দোকানীর পশরা সাজানো বেঁচা কেনায় মন্দির প্রাঙ্গণ ও আশাপাশের এলাকা রুপ নিয়েছে মেলায়।
আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় পূজার উপকরণসহ ঘর গৃহস্থলির কাজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটাও করেছেন।
অনুষ্ঠানে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রলালয়ের হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট নির্বাহী কমিটির মহা সচিব সঞ্জয় গুপ্ত, সদস্য সুশান্ত কর্মকার, কাজল দাশ গুপ্ত, উপজেলা প্রশাসন ও বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্দির কমিটির সাধারন সম্পাদক ডা. দিলীপ কুমার দাস জানান, ৫শ ৩১ বছর আগে মধ্য যুগে সুলতান হোসেন শাহ রাজত্বকালে ১৪৯৪ সনে কবি বিজয় গুপ্ত সাপের দেবী মনসা বা বিষ হরি (বিষ হরণকারী) দেবী কর্তৃক স্বপ্ন দেখে নিজ বাড়ির সু-বিশাল দীঘি থেকে পূজার ঘট তুলে গৈলা গ্রামের নিজ বাড়িতে দেবী মনসার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরে দেবী মনসার স্বপ্ন আদেশে পাশ্ববর্তী বকুল গাছের নীচে বসে “পদ্মপুরাণ” বা “মনসা মঙ্গল” কাব্য রচনা করেন। সেই থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশসহ সর্বত্রই পঞ্জিকা মতে শ্রাবন মাসের শেষ দিনে দেবী মনসা পূজার প্রচলনের সাথে সাথে গৈলা মনসা মন্দিরে দেবী মনসার নিত্য পূজা অর্চণাসহ বার্ষিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মনসা মঙ্গল কাব্য বাংলা সাহিত্যে অমর কাব্য হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে।