রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ‘পোষ্য কোটা’ নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালসহ সব বৈষম্য দূর করার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যান্য দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করলেও আজ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন তাঁরা। এর অংশ হিসেবে পরীক্ষা ও জরুরি সেবা ছাড়া অধিকাংশ বিভাগ ও দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ আছে। দাবি না মানলে আগামীতে তাঁরা প্রশাসনিক কার্যক্রম অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অন্যদিকে দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটাকে অযৌক্তিক ও অন্যায্য দাবি করে তা কোনো ফরম্যাটে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রশাসনিক ভবনের ফটকে উর্দু বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দাবির মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা-অযৌক্তিকতা নেই, আছে শুধু একটা বিভ্রান্তি। বলা হচ্ছে আমরা নাকি কোটার দাবিতে আন্দোলন করছি। আমরা পোষ্য কোটা দাবিতে আন্দোলন করছি না। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটার কবর রচনা হয়েছে। আমরা কোটার জন্য নয়, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা আদায়ের জন্য দাঁড়িয়েছি। এর জন্য আমরা প্রশাসনকে ব্ল্যাকমেইল করছি না, রাকসুকে ভুণ্ডুল করার চেষ্টা করছি না, কারও অধিকার হরণ করছি না। আমাদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।’
অফিসার সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের পরিধি এবং কর্মসূচি আরও কঠিন থেকে কঠিন হবে। আমাদের দাবি আদায় না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম ভবিষ্যতে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘পোষ্য কোটার’ এই আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা।
তিনি বলেন, ‘পোষ্য কোটাকে শিক্ষক-কর্মকর্তারা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বলছেন। পোষ্য কোটাকে যে মোড়কেই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। পোষ্য কোটা একটা মীমাংসিত বিষয়, যা বাতিল বলে গণ্য হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এর প্রতীকী কবর নির্মাণ করেছেন। রাকসুর তফসিল ঘোষণা হয়ে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে চলমান আছে। সামনে মনোনয়ন উত্তোলন।
এই জায়গায় এসে জামায়াত এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা পোষ্য কোটাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অংশীদার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এটাকে আমরা একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছি।’
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল্লাহ মুহিব বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তারা অন্যায্য সুবিধা ভোগ করতে করতে অধিকার বানিয়ে ফেলেছে। অথচ তাঁরা টের পান না, লাখ টাকা বেতন নিয়ে, ভালো বাড়িতে থেকে ভোগবিলাস করার পরও তাঁরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী।
অন্যদিকে আমরা যারা নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তারা হলাম, এগিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৬৭, ৬৮ নম্বর পেয়ে চান্স পায় না, সেখানে ৩১ পেয়ে তাদের সন্তানরা ভর্তি হয়। এটা কোন ধরনের ন্যায্যতা?’