অরক্ষিত রেলক্রসিং পরিণত হয়েছে ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদে। এসব অরক্ষিত রেলক্রসিং দিয়ে প্রতিদিনই পারাপার হচ্ছে অসংখ্য পথচারী ও যানবাহন। ফলে প্রায়ই দেশে ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও কম নয়। এ ভয়াবহ দুর্ঘটনার পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অবৈধ ও গেটম্যানবিহীন রেলক্রসিং। প্রায়ই সারা দেশের কোথাও না কোথাও রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু যেমন হচ্ছে। তেমনিভাবে হতাহতের সংখ্যাও কম নয়। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, রেলপথে যাতায়াত অনেকটা নিরাপদ ও আরামদায়ক। কিন্তু যখন নানা কারণে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে- তখন তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। সারা দেশে রেলওয়ের রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে অনুমোদিত মাত্র ৭৮০টি। বাকি এক হাজার ৭৬১টিই অনুমোদনহীন। সব মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিং এখন মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তথ্য নি:সন্দেহে উদ্বেগজনক। আর্থিক সংকটের কারণে অনেক রেলক্রসিংয়ে এখনো পাহারাদার নিযুক্ত করতে পারেনি। ফলে রেলক্রসিংগুলোতে নেই কোনো গেটম্যান, এমনকি এসব গেটে কোনো গেট বেরিয়ারও নেই। নেই ডিভাইস পদ্ধতির সিগন্যাল সিস্টেমও। ফলে ঝুঁকি নিয়ে যেমন রেলপথে চলছে রেল, তেমনিভাবে রেলক্রসিং পার হচ্ছে শত শত মানুষ ও যানবাহন। আর এই ঝুঁকির মুখে রেলক্রসিংগুলো পরিণত হয়েছে এক একটি মৃত্যু ফাঁদে। রেল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে রেলক্রসিংগুলোকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে অবশ্যই গেটম্যান থাকা নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে নেই সেখানে দ্রুত নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চাই, রেলওয়েতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে, রেললাইনগুলোর সংস্কার করে এবং নতুন ইঞ্জিন যুক্ত করে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করা হোক। এ ক্ষেত্রে অবকাঠামো খাতের মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই একসঙ্গে বসে করণীয় ঠিক করতে হবে। স্থানীয় কমিউনিটিকে অন্তর্ভুক্ত করে কীভাবে অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, তার সমাধান বের করা জরুরি। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিতভাবেই একটি কাঠামোগত ও অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড। এই মৃত্যুর মিছিল অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। “অবৈধ লেভেল ক্রসিং যারা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক পরিচয়েও কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।” এই দুর্ঘটনা চাইলেই বন্ধ করা সম্ভব যদি রেল ও স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করে।”