রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫-এর মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম হঠাৎই বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন। বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। বুধবার মনোনয়নপত্র বিতরণের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাতে তার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে গত ২৮ জুলাই ঘোষিত রাকসু নির্বাচনের তফসিলে জানানো হয়েছিল ২০ আগস্ট বুধবার সকাল ৯টা থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে এবং ১৫ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, অনিবার্য কারণবশত ২০ আগস্টের মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পরবর্তী নির্দেশনা নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে। এদিকে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও ভোটারদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়েছে শিবিরসহ একাধিক সংগঠন। সম্ভাব্য ভিপি পদপ্রার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। যা রাকসু হওয়ার পথে আরেকটি বাধা। মনোনয়ন প্রত্যাশী আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আকিল বিন তালেব বলেন, যৌক্তিক কারণ উল্লেখ না করেই মনোনয়নপত্র বিতরণ স্থগিত করা হয়েছে। শুরু থেকেই যে ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, আজকের এই সিদ্ধান্ত তারই বাস্তব প্রতিফলন। রাকসু নির্বাচন অবশ্যই ঘোষিত তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে হবে। নির্ধারিত তারিখ থেকে কোনো প্রকার ব্যত্যয় ঘটলে তা দীর্ঘমেয়াদে গভীর সংকট তৈরি করবে, যার দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। এদিকে রাকসু কমিশনের এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ এবং সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল। বিবৃতিতে তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের অছাত্রদেরকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন যদি কোনো সংগঠনের সঙ্গে সমঝোতা করে থাকে এবং নির্দিষ্ট সময়ে রাকসুর সব কাজ সমাধান কিংবা শেষ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে এই ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থী এটার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে এবং রাকসু আদায়ের জন্য কঠোর হবে। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছি। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে গতকাল প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ কারণে আবাসিক হলে মনোনয়ন পৌঁছে দিতে পারিনি। তাই আজ সকালে মনোনয়নপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। খুব দ্রুত আমরা নতুন তারিখ ঘোষণা করব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পর ১৯৬২ সালে রাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মোট ১৪টি নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে রাকসু নির্বাচন হয়েছিল। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।